আসানসোল : ৬ মাস আগে নিয়ম মেনে টেন্ডার হয়েছে। সেই টেন্ডারে সর্বোচ্চ বা প্রথম বিডার হিসেবে চারমাস আগে নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও এখনো পর্যন্ত আসানসোল পুরনিগমের ২৩ নং ওয়ার্ডে শ্রীনগরের “সগুণ’ কমিউনিটি হল দখল নিতে পারেনি বেসরকারি সংস্থা এমবি এন্টারপ্রাইজ।
এই কমিউনিটি হল জোর করে দখলে বা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে আসানসোল পুরনিগমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর সিকে রেশমার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, সোমবার শাসক দলের কাউন্সিলার কমিউনিটি সেন্টারের টেন্ডার পাওয়া ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন। একইসাথে, তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন নিজের দলের পরিচালিত আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধেও। যদিও ওই বেসরকারি কোম্পানির কর্ণধার মণিদীপা ভট্টাচার্য এদিন কাউন্সিলারের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি কোনও ফেভার নিইনি। আমি আইন মতো টেন্ডারে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ বিডার হয়ে, চারমাস আগে পুরনিগমকে টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও আমি কমিউনিটি সেন্টার হাতে পাইনি। আর ওই কাউন্সিলার যেসব অভিযোগ করেছেন, তার কোনও সত্যতা নেই। আমি গীতবিতানে যা করেছি, তার বৈধ প্ল্যান ও অনুমোদন আছে। যে কেউ, তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
জানা গেছে, শাসক দলের কাউন্সিলার হিসেবে সিকে রেশমা বছরে নামমাত্র টাকা আসানসোল পুরনিগমকে দিয়ে ওই কমিউনিটি সেন্টারটি চালাচ্ছেন। ৬ মাসে আগে আসানসোল পুরনিগম ২৩ নং ওয়ার্ডের এই কমিউনিটি সেন্টারের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে। তাতে সিকে রেশমার সংস্থাও অংশ নেয়। কিন্তু এমবি এন্টারপ্রাইজ বছরে সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ওই কমিউনিটি সেন্টারটি পায়। সিকে রেশমার সংস্থা সেকেন্ড বিডার হয়। তারা বছরে ৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দর দিয়েছিল। কিন্তু তারপরের সিকে রেশমা ওই কমিউনিটি সেন্টারের দখলদারি ছাড়েননি। যা, নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, শাসক দলের কাউন্সিলর হিসেবে সিকে রেশমা সরকারি কোনও সম্পত্তি জোর করে দখলে রাখতে পারেন?
সোমবার আসানসোল পুরনিগমের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আর কে শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে একটি দল শ্রীনগর এলাকায় আসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার সুদীপ্ত ঘটক। তারা সর্বোচ্চ দর দেওয়া এমবি এন্টারপ্রাইজকে কমিউনিটি সেন্টারটি দখলে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় সেখানে আসেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সি কে রেশমা। তিনি এর বিরোধিতা করেন। পুরনিগমের টিমকে তিনি বাধা দেন। তিনি পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ার ও লিগাল এ্যাডভাইজারের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
জানা গেছে, এই কমিউনিটি সেন্টার দখল নেওয়া নিয়ে একটা সমস্যা হতে পারে। তাই আসানসোল পুরনিগমের তরফে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশকে আগাম জানানো হয়েছিল। যাতে পুলিশ সেখানে থাকে। কিন্তু পুরনিগমের টিম গেলেও, পুলিশ সেখানে যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই পুরানো টিমকে কাউন্সিলারের বাধায় কমিউনিটি হল টেন্ডার পাওয়া কোম্পানিকে হ্যান্ডওভার না করেই ফিরে আসতে হয়।
আরো জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের তরফে চিঠি দেওয়া হলেও, শাসক দলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার কথায় পুলিশ এদিন সেখানে যায়নি। যে কারণে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এদিন সি কে রেশমা বলেন, এমবি এন্টারপ্রাইজ আগে আসানসোল পুরনিগমের নির্মিত ” গীতবিতান ” দখল করে আছে। এমবি এন্টারপ্রাইজেস সেখানে একটি সুইমিং পুল এবং একটি রেস্তোরাঁ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, কমিউনিটি হলগুলি দরিদ্রদের জন্য। কিন্তু এমবি এন্টারপ্রাইজেস একটি বিশাল অঙ্কের টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে জমা দিয়ে আসানসোল পুরনিগমের সব কমিউনিটি হল দখল করছে। এটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যবহার করছে। এর ফলে, এই এলাকার দরিদ্র মানুষ একটি কমিউনিটি হল থাকা সত্ত্বেও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই, আমি এদিন পুরনিগমের টিমকে বাধা দিয়েছি। তিনি এদিন পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বোপরি, শুধুমাত্র একটি কোম্পানিকে সবকিছুর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সব কমিউনিটি হলের জন্য টেন্ডার কিভাবে দেওয়া হচ্ছে তাও তদন্তের বিষয়।
তবে, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আর কে শ্রীবাস্তব বলেন , এই কমিউনিটি সেন্টারটি এমবি এন্টারপ্রাইজ ন্যায্যভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়েছে। এখন আসানসোল পুরনিগমের দায়িত্ব হলটি টেন্ডারের মাধ্যমে নেওয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া। এদিন আমরা এই কাজ করতে এসেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এতে বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি আরো বলেন, এই পুরো বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা কি, তা আমার বোধগম্য হলোনা। ওই কাউন্সিলার তো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি টেন্ডার তা পাননি। যে কারণে তিনি আসানসোল পুরনিগমের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। আমি গোটা বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবো।










