অভিষেক সেনগুপ্ত, জলপাইগুড়ি: গ্যাস, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় মিলবে দ্রুত রেহাই — এমনই দাবি জলপাইগুড়ির ফার্মা-বিজ্ঞানী শিবাঞ্জন পাল রায়ের। বিদেশি তিন গাছের বাকল, শিকড়, ফলের নির্যাস এবং কিছু রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে তিনি তৈরি করেছেন এক ‘নিউট্রাসিউটিক্যাল’ ওষুধ। ওই বিজ্ঞানীর দাবি, খুব শীঘ্রই এই ওষুধ বাজারে আসছে, এবং তুলনামূলকভাবে এর দাম কম হওয়ায় দুঃস্থ রোগীরাও উপকৃত হবেন। জানা গেছে, হরিয়ানার একটি ফার্মা সংস্থা ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ওষুধটি তৈরি শুরু করেছে।
শহরের রেসকোর্স পাড়ার বাসিন্দা শিবাঞ্জনের বাবা লক্ষ্মীকান্ত পাল রায় ছিলেন বেলাকোবা হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক এবং মা পলি পাল রায় ছিলেন বিএসএনএলের অ্যাকাউন্টস আধিকারিক। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে জলপাইগুড়িতেই থাকেন শিবাঞ্জন।
শিক্ষাজীবনের শুরু শহরের ফনীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউটে, উচ্চ মাধ্যমিক মালবাজারের সিজার স্কুল থেকে। জলপাইগুড়ি ফার্মেসি কলেজ থেকে ‘ডি-ফার্ম’ এবং তামিলনাড়ুর এক কলেজ থেকে ‘বি-ফার্ম’ সম্পন্ন করেন তিনি। পরে ইন্দোরে ‘এম-ফার্ম’ করার সময় থেকেই গবেষণার কাজে যুক্ত হন শিবাঞ্জন। বর্তমানে বোকারোর এক ফার্মেসি কলেজে সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড রিসার্চার কাউন্সিল তাঁকে ‘এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানী’-র সম্মানে ভূষিত করে।
শিবাঞ্জনের কথায়, “চাইছিলাম এমন একটি ওষুধ তৈরি করতে যাতে সাধারণ মানুষ সহজে, কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পান। একইসঙ্গে যাতে ওষুধের দামও কম থাকে। তবে, গর্ভবতী মহিলারা এই ওষুধ সেবন করতে পারবেন না।”
দক্ষিণ আমেরিকা, চিন ও উত্তর আমেরিকার তিনটি গাছের বিভিন্ন অংশের নির্যাস ও কিছু প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে এই ওষুধ। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সামনে ওষুধের প্রয়োগ ও ফলাফল তুলে ধরেন শিবাঞ্জন। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ও পরিবেশপ্রেমী ‘বঙ্গরত্ন’ রাজা রাউত এবং গবেষক প্রত্যুষ কুমার মিশ্র।
রাজা রাউতের বক্তব্য, “জলপাইগুড়িতে বসে এমন একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য সত্যিই গর্বের।”

শিবাঞ্জন পাল রায়, ফার্মা বিজ্ঞানী
শিবাঞ্জনের দাবি, তাঁর ওষুধের ‘ইন সিলিকো ট্রায়াল’ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রি-গ্রান্ট পেটেন্টও পাওয়া গেছে। বর্তমানে হরিয়ানার ফার্মা সংস্থা সেটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছে। তাঁর কথায়, “এই ওষুধের দাম এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দুটোই তুলনামূলকভাবে অনেক কম, ফলে সবাই উপকৃত হবেন।”










