কোলফিল্ড টাইমস: টেট পাশ না করলে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি থাকবে না— এমন রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবার সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই নবান্ন থেকে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে খুব শিগগিরই স্কুল শিক্ষা দফতর রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদোন্নতির জন্য টেট উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। আগামী দু’বছরের মধ্যে টেট পাশ না করলে চাকরি ছাড়তে হবে অথবা চূড়ান্ত সুবিধা নিয়ে অবসরের আবেদন জানাতে হবে। তবে যাঁদের অবসর নিতে পাঁচ বছরেরও কম বাকি, তাঁদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এই রায় প্রকাশ্যে আসার পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষকমহলে। দীর্ঘ ১৫–২০ বছর ধরে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এখন নতুন করে টেট পরীক্ষায় বসার আশঙ্কায় রয়েছেন। রায় কার্যকর হলে রাজ্যের লক্ষাধিক শিক্ষককে পুনরায় টেট দিতে হবে বলে অনুমান।
শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, এই রায় শুধু চাকরি নয়, প্রাথমিক শিক্ষার মানেও প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যেই একাধিক সংগঠন রায়ের বিরোধিতায় পথে নেমেছে। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “রিভিউ পিটিশনের সিদ্ধান্ত স্বাগত। তবে কেন্দ্রের কাছে আইন সংশোধনের দাবি জানানোও জরুরি।” ‘আমরা দ্যা টিচার সোসাইটি’-র আহ্বায়ক পৃথা বিশ্বাস বলেন, “২০০৬ সাল থেকে শিক্ষকতা করছি। এখন আবার পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে— এটা অমানবিক।”
অন্যদিকে, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও টেট রায় নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ও কেরল ইতিমধ্যেই পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে, তামিলনাড়ু সরকার জানুয়ারি, জুলাই ও ডিসেম্বরে তিন দফায় টেট পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, ওড়িশা ও ত্রিপুরায় টেটবিরোধী আন্দোলনে নামা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রায়ের পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জেলাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, কতজন শিক্ষক টেট পাস করেননি, কারা কবে অবসর নেবেন, কারা পুনরায় পরীক্ষায় বসতে পারবেন— তার বিস্তারিত তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে।