দীপাবলির রাতে ফের শব্দবাজির তাণ্ডব! নির্ধারিত সময়, নিষেধাজ্ঞা— কোনও কিছুর পরোয়া না করে গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে বাজি ফাটানো। তবুও কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার দাবি, গত বছরের তুলনায় এ বছর পরিস্থিতি “অনেক ভাল” এবং দেশের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় “দূষণও কম”।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিপি মনোজ বলেন, “কলকাতায় শব্দদূষণ ৯০ ডেসিবলের নিচে ছিল, যা সীমার মধ্যেই। এ ছাড়া, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমরা বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ করেছি— তখন পর্যন্ত দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ের তুলনায় কলকাতার দূষণ অনেক কম।” তাঁর দাবি, দীপাবলিতে শব্দ ও বায়ুদূষণ— দুই-ই গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে।
তবে বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিয়ম অমান্য করে রাতভর চলেছে বাজির তাণ্ডব। দমদম, নিউটাউন, যাদবপুর, পার্কস্ট্রিট, বিধাননগর— সর্বত্রই আতঙ্কে কেঁপেছে শহর। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ। রাত ১২টার পর বালিগঞ্জ ও বিধাননগরের বায়ুদূষণের সূচক ৪০০ ছাড়িয়ে যায়— যা ‘অতি বিপজ্জনক’ মাত্রা। দূষণে দিল্লিকেও ছাপিয়ে যায় কলকাতার একাধিক এলাকা।
বিধি অনুযায়ী, রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি ছিল। কিন্তু বাস্তবে রাত ২টোর পরও শহরের বহু এলাকায় চলেছে চকলেট বোমা, চরকি, তুবড়ির দাপট। কোথাও রাস্তায়, কোথাও আবার চলন্ত ট্রেনের কামরা লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছে বাজি। আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলেন পথচারী ও যাত্রীরা।
দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদের হিসাবে, সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ৪১টি দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়ে। কসবা, নিউ আলিপুর, সল্টলেক, যোধপুর পার্ক, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ থেকে এসেছে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। পুলিশের কাছেও শব্দবাজি নিয়ে এসেছে শতাধিক অভিযোগ। গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ১৮৩ জন, বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৮৫১ কেজি বেআইনি বাজি।
এ ছাড়াও, সোমবার রাতে শহরজুড়ে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ঘটনা ঘটে ৮৮২টি। এর মধ্যে হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর ৫১৪টি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ১১৬টি এবং মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ধরা পড়েছেন ৯৯ জন। অন্যান্য অপরাধে আরও ১৫৬ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।










