সুপ্রিম কোর্টে তাঁর দিকে জুতো ছোড়ার ঘটনার দু’দিন পর অবশেষে মুখ খুললেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই। বৃহস্পতিবার আদালতে খোলাখুলি বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা যা ঘটেছে তাতে খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম… তবে আমাদের কাছে এটা এখন অতীতের অধ্যায়।”
সোমবার সকালে কোর্ট নং ১-এ দিনের প্রথম মামলার শুনানি শুরু হতেই এক প্রবীণ আইনজীবী, রাকেশ কিশোর নামে, হঠাৎ জুতো খুলে প্রধান বিচারপতির দিকে ছুড়ে দেন এবং চিৎকার করে বলেন, “সনাতন কা অপমান নহি সহেঙ্গে।” জুতোটি অবশ্য বেঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আদালতকক্ষের নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে আটক করে বাইরে নিয়ে যান।
বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার পাশে বসেই শান্তভাবে আদালতের কাজ চালিয়ে যান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “আমি এমন ঘটনায় প্রভাবিত হই না। এগুলিতে মনোযোগ হারাবেন না, আমরাও হারাচ্ছি না।”
সুপ্রিম কোর্ট কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি রেজিস্ট্রিকে নির্দেশ দিয়েছেন ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে। তবে দিল্লি পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। তাঁর জুতো পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স (আগের টুইটার)-এ তিনি লিখেছেন, “সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির ওপর হামলার ঘটনা প্রত্যেক ভারতবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের নিন্দনীয় কাজের কোনও স্থান আমাদের সমাজে নেই।”
আইনজীবী রাকেশ কিশোরের নাম কেটে দিয়ে তাঁকে সাসপেন্ড করেছে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (বিসিআই)। তাদের বক্তব্য, “এই আচরণ আদালতের মর্যাদার পরিপন্থী।” বিসিআই-এর আদেশ অনুযায়ী, কিশোরকে দেশের কোনও আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষে আইনজীবী হিসেবে হাজিরা দেওয়া বা চর্চা করার অনুমতি নেই।
সম্প্রতি খাজুরাহোর বিষ্ণু মূর্তি পুনর্নির্মাণ মামলায় প্রধান বিচারপতির মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি আবেদনকারীকে বলেছিলেন, “যদি আপনি বিষ্ণু ভক্ত হন, তবে প্রার্থনা করুন, ঈশ্বরই ব্যবস্থা করবেন।” সেই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে বিচারপতি গাভাই বলেন, “আমি সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “এই আক্রমণ ক্ষমার অযোগ্য। প্রধান বিচারপতির সৌজন্য ও ধৈর্য প্রশংসনীয়। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।”