চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়: বাতাসে ভালই আর্দ্রতা ছিল । আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী গরম অনুভূত হয়েছে ৩৫ ডিগ্রির মতো। বুধবারের সন্ধ্যাতেও ঘামে জবজব পরিস্থিতি। কিন্তু তাতে কী? কালীপুজোর দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় বারাসতে ঠাকুর দেখতে বের হয়েছেন বহু মানুষ। গত কয়েকদিন ভর দুপুরে দর্শনার্থীদের এত ভিড় নজরে আসেনি। সন্ধ্যার পর মানুষের ঢল বেড়েছে কয়েক গুণ।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে ভিড়টা ক্রমেই বেড়েছে এ দিন। জাতীয় সড়কের ধারের বড় পুজো মণ্ডপগুলিতে হাত ধরাধরি করে প্রেমিক যুগল থেকে সাধারণ দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন। রাত যত বাড়ছে জনজোয়ারে ভাসছে বারাসাত।
স্বাভাবিকভাবেই ভিড় সামাল দিতে আরও বেশি তৎপর হয়েছে পুলিশ। দর্শকদের ভিড় দেখে দুপুর থেকেই ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। জাতীয় সড়কের মাঝখানে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়। জাতীয় সড়ক ধরে কিছুটা এগোলেই কেএনসি রেজিমেন্টের পুজো মণ্ডপ। দর্শনার্থীদের ভিড়টা সেখানে বেশি। পুলিশের গার্ডরেলের ব্যারিকেডটা রাস্তার ধার থেকে সরিয়ে একেবারে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর রাত যত এগিয়েছে শহরের প্রতিটি মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড় বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা পুলিশ এবং পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের।
সন্ধ্যার আগেই শহরজুড়ে জ্বলে উঠেছে বর্ণময় আলোকসজ্জা। জাতীয় সড়ক থেকে কেএনসি রোড, যশোহর এবং টাকি রোড দর্শনার্থীদের দখলে চলে গিয়েছে। বিদ্রোহীর পুজোয় রকমারি আলোর রোশনাই আর মাইকে ভেসে আসা স্বর্ণযুগের গানে কেউ প্রেমের শুরুর স্মৃতি খুঁজে পেয়েছেন, কারও চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আবেগ। শতদলের পুজো মণ্ডপ থেকে তখন ভেসে আসছে স্বর্ণযুগের গান। আর সেই গানের সঙ্গে গুনগুন করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন দর্শনার্থীরা। কোথাও বেজেছে পান্নালাল ভট্টাচার্য থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান।
বাঙালির নস্টালজিয়াকে মাথায় রেখে শহরের পুজো উদ্যোক্তারা সারাদিনই বাজিয়েছেন স্বর্ণযুগের গান।
মান্না দে–র গলায় ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আর নেই’ –এর সুরে ঠোঁট মিলিয়ে দুপুর থেকে রাতভর এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে বেড়িয়েছেন দর্শনার্থীরা। মাঝে মাঝে অবশ্য জনপ্রিয় গানের ছন্দ কেটেছে ছোটদের তারস্বরে ভেঁপু বাজানোর শব্দে। কিন্তু তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই দর্শনার্থীদের। কারণ, এবারের কালীপুজোতেও বারাসত আছে বারাসতে। দেদার আনন্দ আর উৎসবে মেতে উঠেছেন আট থেকে আশি সবাই।










