Home / খবর / শিল্প-বাণিজ্য / দুর্গাপুর ফরেস্ট ডিভিশনের ১০৯ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি কয়লাখনি প্রকল্পে ব্যবহারে কেন্দ্রের নীতিগত সম্মতি, পুনর্বাসন পাবেন ৬২৯ পরিবার

দুর্গাপুর ফরেস্ট ডিভিশনের ১০৯ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি কয়লাখনি প্রকল্পে ব্যবহারে কেন্দ্রের নীতিগত সম্মতি, পুনর্বাসন পাবেন ৬২৯ পরিবার

coal

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর ফরেস্ট ডিভিশনে গৌরাঙ্গডিহি এবিসি কয়লাখনি প্রকল্পে ১০৯.৪৫৯ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি ব্যবহারের প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। গত ৩০ জুলাই মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সরকারি নথিতে জানানো হয়েছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড (WBMDTCL)-এর অধীনে থাকা এই কয়লাখনি প্রকল্পটির মোট বিস্তৃতি ৩৫৬.৫৭৫ হেক্টর, যার মধ্যে ১০৯.৪৫৯ হেক্টর বনভূমি।

এই বনভূমির ছায়া ঘনত্ব বা ক্যানোপি ডেনসিটি প্রায় ০.৪, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ এলাকাজুড়ে গাছপালার ঘন ছায়া রয়েছে। এখানে আনুমানিক ৫,২০০টি গাছ রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই আকাশমণি। এই অঞ্চলে ভারতীয় শিয়াল, বেঙ্গল ফক্স, সজারু, রক পাইথন, স্পেক্টাকল্ড কোবরা ও রাসেল ভাইপারের মতো বন্যপ্রাণের উপস্থিতি রয়েছে। তবে এই এলাকা কোনও জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা বা বন্যপ্রাণ করিডরের আওতাভুক্ত নয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৬২৯টি পরিবারের পুনর্বাসনের প্রয়োজন হবে, যারা মূলত খনির লিজ এলাকায় অবস্থিত অরণ্যবহির্ভূত জমিতে বসবাস করেন। WBMDTCL-এর পক্ষ থেকে তাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী তৈরি করা হবে।

পরিবেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি জানিয়েছে, ১০ হেক্টরের কম আকারের প্রতিস্থাপন বনাঞ্চল এলাকায় চেন-লিঙ্ক বেড়া দিয়ে ঘেরা বাধ্যতামূলক এবং ২০ বছর ধরে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সেইসঙ্গে অন্তত ১৮ মাস বয়সী উঁচু চারা গাছ রোপণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এলাকা ঘিরে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্ত খরচ ব্যবহারকারী সংস্থাকেই বহন করতে হবে। জমির ক্ষয় এবং জলধারণ ক্ষমতা বজায় রাখতে মাটি ও আর্দ্রতা সংরক্ষণ পরিকল্পনা তৈরিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রথমবার এই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়ে ২০১৯ সালে। পরবর্তী সময়ে তা বহুবার সংশোধন, তদন্ত এবং মাঠপর্যায়ের পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে গেছে। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, কাছাকাছি কোথাও ওভারবার্ডেন ফেলার জন্য অরণ্যবহির্ভূত জমি নেই, তাই খনিজবিহীন বনভূমি ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই।

কমিটি গাছ কাটা কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এবং কয়লা পরিবহণে রাস্তাঘাটে দূষণ কমাতে কনভেয়ার বেল্ট ব্যবহারের কথা বললেও, রাজ্য সরকার জানিয়েছে এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল হওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

সবকিছু ঠিকঠাক চললে গৌরাঙ্গডিহি কয়লাখনি প্রকল্প রাজ্যের খনি শিল্পে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারে। তবে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও পুনর্বাসনের বিষয়গুলির ওপর নজর রাখা হবে বলেই আশা।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *