Home / খবর / জেলায় জেলায় / জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে কুলটিতে শুটআউট, পুরকর্মী খুনে জড়িত সন্দেহে ধৃত ১, পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত

জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে কুলটিতে শুটআউট, পুরকর্মী খুনে জড়িত সন্দেহে ধৃত ১, পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত

কুলটি ও আসানসোল : জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য রাস্তায় শুট আউট। সেই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসের এক ঠিকা কর্মীর।

জানা গেছে, শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের রহমান পাড়ায় জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে এই গুলি চলার ঘটনাটি ঘটে। মৃত পুর কর্মীর নাম সৈয়দ জাভেদ বারি (৫০)। এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শুক্রবার রাতেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকারই বাসিন্দা ইন্তেকাল আলম নামে এক যুবককে নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ গ্রেফতার করে। শনিবার সকালে তাকে ১০ দিনের হেফাজত চেয়ে পুলিশ আসানসোল আদালতে পেশ করে। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তার জামিন নাকচ করে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এদিকে, শনিবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পুর কর্মীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। সেখানে পুর কর্মীর মাথার বাঁদিক থেকে একটি কার্তুজ পাওয়া গেছে। সেই কার্তুজ ৯ এমএম পিস্তলের বলে জানা গেছে। সেই কার্তুজ পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষা করাবে। যা তদন্তের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের রহমান পাড়ায় একটি গলির মধ্যে দুই মোটরবাইক আরোহী সৈয়দ জাভেদ বারির মাথার ডানদিক লক্ষ্য করে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে সে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকেরা ছুটে আসার আগেই আততায়ীরা মোটরবাইক করে মুহুর্তের মধ্যে বেপাত্তা হয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি রাস্তার মোড়ে লাগানো সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে। সেই সিসি টিভির ফুটেজ পরে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, আগে থেকেই রাস্তার মোড়ে দুজন মোটরবাইকে বসে আছে। তাদের পেছনের দিক থেকে হাঁটতে হাঁটতে আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসের ঠিকা কর্মী সৈয়দ জাভেদ বারি বাড়ির দিকে যাচ্ছে। জাভেদ একটু এগোতেই দুজন মোটরবাইক স্টাট করে। ১০/১৫ ফুট যাওয়ার পরেই মোটরবাইকের পেছনে বসে থাকা যুবক ( গায়ে চাদর ঢাকা দেওয়া) জাভেদের পাশে আসা মাত্রই পিস্তল বার করে, তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এরপর এলাকার বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যরা গুলিবিদ্ধ আহত জাভেদকে প্রথমে কুলটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (কুলটি) জাভেদ হুসেন সহ পুলিশ আধিকারিকরা এলাকায় ছুটে আসেন।

মৃত ব্যক্তির আত্মীয় সৈয়দ পারভেজ বারি পুলিশকে জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ বাড়িতে খাবার খেয়ে রাস্তার মোড়ে পান খাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন সৈয়দ জাভেদ বারি। পান খেয়ে হেঁটে সে বাড়ির দিকে আসছিলেন। তখন তাঁকে দুই যুবক মোটরবাইক করে এসে খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়ে খুন করে। কারা সেই দুজন, তা তাঁরা জানেন না। রাতেই পরিবারের তরফে গোটা বিষয়টি জানিয়ে কুলটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসের ঠিকা কর্মীকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে খুন করার ঘটনার তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জমি সংক্রান্ত একটি বিবাদের কথা জানতে পারে। সেই জমি আছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। শ্বশুরবাড়ির সেই জমি নিয়ে সৈয়দ জাভেদ বারির সঙ্গে তাঁর পরিচিত কয়েকজনের বিরোধ চলছিল। যা নিয়ে, আগেও গন্ডগোল হয়েছে। খুন হওয়ার পরে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী শবনম খাতুন সহ পরিবারের সদস্যরা সেই জমির কথা বলেছেন।

তাঁদের দাবি, এই জমির জন্যই তাঁকে খুন করা হয়েছে। তারা বেশ কয়েকজনের নাম পুলিশকে জানিয়েছেন। এরপরেই রাতেই নিয়ামতপুর থেকে ইন্তেকাল আলমকে পুলিশ প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত যুবক গুলিবিদ্ধ জাভেদকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন সে সেখানে ছিল। পুলিশ এখন বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এসিপি ( কুলটি) জাভেদ হুসেন বলেন, পরিবারের তরফে জমি নিয়ে একটা বিবাদের কথা বলা হয়েছে। একটি খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করে, তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জেরা করে ঠিক কি কারণে এই ঘটনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *