উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: ধান চাষে বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে জীবিকার টানাপোড়েন সামলাচ্ছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা। বিকল্প কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ না থাকায় অনেকে মাছ চাষকে ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তির অভাবে সেই চাষে কাঙ্ক্ষিত লাভ মিলছে না। এ অবস্থায় সুন্দরবনের মৎস্যচাষিদের পাশে দাঁড়াল সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ এডুকেশন (সিফে)।
কুলতলী মিলন তীর্থ সোসাইটির সহযোগিতায় বাসন্তীতে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ শিবিরে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সিফের প্রধান বিজ্ঞানী ও ইনচার্জ ড. তাপস কুমার ঘোষাল বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাছের ফলন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে যেমন স্থানীয় প্রান্তিক পরিবারগুলির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব, তেমনই মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও মেটানো যাবে।”
মিলন তীর্থ সোসাইটির কর্ণধার লোকমান মোল্লা জানান, “সুন্দরবনের বিকল্প কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মাছ চাষই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে আধুনিক প্রশিক্ষণ ছাড়া এই খাতে লাভজনক হওয়া সম্ভব নয়।”
সিফের বিজ্ঞানী ড. সুজাতা সাউ মনে করেন, “পুকুরে সুসংহত মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস ও প্রাণিসম্পদ পালনে সার্বিক উন্নয়ন ঘটতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের মতো সুন্দরবনের মৎস্যচাষিরাও আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করলে স্বনির্ভর হতে পারবেন।”
বাসন্তী ব্লকের ফিশারিজ এক্সটেনশন অফিসার অমিত রায় জানান, প্রশিক্ষণ ছাড়া সফল হওয়া কঠিন। তাই আগ্রহী মৎস্যচাষিদের তিনি হাতে-কলমে শেখা প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। অন্যদিকে, ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের ভাঙ্গন খালি শাখার ম্যানেজার অভিলাষ চক্রবর্তী আশ্বাস দিয়েছেন, “যদি কেউ ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করতে চান, ব্যাঙ্ক সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে।”
প্রশিক্ষণের প্রথম দফা চলবে তিন দিন। দ্বিতীয় দিনে ড. লিজা প্রিয়দর্শিনী মাছের রোগবালাই নিয়ে আলোচনা করেছেন, আর বিজ্ঞানী সুয়েতা ‘মুক্ত চাষ’কে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ হিসেবে তুলে ধরেছেন। প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি সুন্দরবনের মৎস্যচাষিদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।