দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই ভয়াবহ দুর্যোগ উত্তরবঙ্গে। শনিবার রাত থেকে অবিরাম বর্ষণে দার্জিলিং ও কালিম্পং-সহ পাহাড়ি জেলাগুলিতে নেমেছে বিপর্যয়। মাত্র ১২ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিতে ধসে ভেঙে পড়েছে বাড়ি, সেতু, রাস্তা— প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। স্থানীয়দের দাবি, ১৯৯৮ সালের পর এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা আর দেখা যায়নি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক ও সুখিয়াপোখরিতে, মিরিকেই প্রাণহানির সংখ্যা সর্বাধিক। দারাগাঁও, দুধিয়া, ডাম্ফেডা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ধসে বহু বাড়ি ভেঙে গেছে, একাধিক হোমস্টে জলের তলায়। দুধিয়া নদীর পাড়ে থাকা বিএসএফ ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত। উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা ও স্থানীয় পুলিশ, যদিও লাগাতার বৃষ্টিতে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
পাহাড়ে আটকে পড়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। প্রশাসনের অনুমান, সংখ্যা কয়েক হাজারেরও বেশি। ধস ও সেতু ভাঙনের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রধান যোগাযোগ পথগুলি— শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমের রাস্তা কার্যত অচল। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক অংশে তিস্তার জল বইছে, বিকল্প ৭১৭ সড়কও বন্ধ। দুধিয়া সেতু ভেঙে শিলিগুড়ির সঙ্গে মিরিকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দিলারাম-হুইসেলখোলা এলাকায় ধস নামায় ৫৫ নম্বর সড়কও বন্ধ। রোহিনীর পথ ক্ষতিগ্রস্ত, ফুলবাড়ি সেতু ভাঙায় বিজনবাড়ি ও থানালাইনও বিচ্ছিন্ন।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবারই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সকাল থেকেই নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে তিনি পরিস্থিতি মনিটর করছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সকাল ৬টা থেকেই ডিজি ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। বলেন, “দুর্যোগ তো আমাদের কারও হাতে নেই। আমরা মর্মাহত। পাঁচ জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি। আশা করছি সোমবার বিকেল ৩টার মধ্যে পৌঁছে যাব।”
বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবারকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করবে। সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা কেউ তাড়াহুড়ো করবেন না। যেখানে আছেন, থাকুন। হোটেলগুলো যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়, সেটা প্রশাসন দেখছে।”