Home / খবর / জেলায় জেলায় / বহড়ুর ময়দার শতাব্দীপ্রাচীন পাতালভেদী দক্ষিণাকালী আজও জাগ্রত

বহড়ুর ময়দার শতাব্দীপ্রাচীন পাতালভেদী দক্ষিণাকালী আজও জাগ্রত

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর : দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার অন্তর্গত সুন্দরবন সংলগ্ন ময়দা গ্রাম শুধু ইতিহাস নয়, আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র হিসেবেও সমান খ্যাত। আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন গ্রামে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন পাতালভেদী দক্ষিণাকালী মন্দির, যার খ্যাতি আজও ঘরে ঘরে।

ইতিহাস বলছে, একসময় বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল ময়দা। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘আত্মচরিত’-এও ময়দার উল্লেখ পাওয়া যায়। শিবনাথ লিখেছেন, প্রাচীন বাংলা কাব্য ও পর্তুগিজ যাত্রাবৃত্তান্তে এই গ্রামের নাম বারবার এসেছে। নামের উৎপত্তি নিয়েও রয়েছে নানা কাহিনি। কেউ বলেন, রাবণরাজের শ্বশুরমশাই ও ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত স্থপতি ‘ময়দানব’-এর নাম থেকেই এসেছে ‘ময়দা’। আবার অনেকে মনে করেন, পর্তুগিজরা এই অঞ্চলের নাম দিয়েছিল ‘মদিয়া’, যা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘ময়দা’।

জনশ্রুতি অনুসারে, সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের এক জমিদার একদিন বজরায় চড়ে গঙ্গা ভ্রমণে বেরিয়ে দূরে একটি বকুলগাছে এক কন্যাকে দোল খেতে দেখেন। মাঝিরা তাঁকে সাবধান করে বলে, “ও ডাইনি, ওকে ধরা যায় না।” সেই রাতেই জমিদার স্বপ্নে দর্শন পান। কন্যাটি জানায়, সে পাতালভেদী দক্ষিণাকালী, এবং বকুলগাছের গোড়ায় মাটির নিচে একখণ্ড শিলা রয়েছে, সেখানেই মন্দির গড়ে তুলতে হবে। পরদিন সেই নির্দেশ অনুযায়ী মাটিখুঁড়ে পাওয়া যায় দেবীর প্রতিমা। সেই থেকেই শুরু হয় পূজার্চনা।

আজও সেই মন্দিরে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। শুধু কালীপুজোতেই নয়, ভাদ্রমাসের তালনবমী, শ্রাবণের অম্বুবাচী, বৈশাখ ও মাঘ মাসের প্রথম দিনে বিশেষ উৎসব পালিত হয়। দক্ষিণা কালীবাড়ি উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে এই দিনগুলোতে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে ভক্তদের সমাগমে। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার নিয়মিত পুজোর সঙ্গে বসে বিশাল মেলা।

ভক্তদের বিশ্বাস, মা দক্ষিণাকালী আজও তেমনি জাগ্রত — মন থেকে প্রার্থনা করলে পূর্ণ হয় সকল ইচ্ছা। কালীপুজো আসতেই মন্দির চত্বরে এখন সাজো সাজো রব। বহড়ু স্টেশনে নেমে ভ্যান বা টোটোয় সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই প্রাচীন তীর্থে। একবার দেখা হলে মন ভরে যায়— যেন মা নিজে আহ্বান করছেন তাঁর ভক্তদের।

alternatetext
Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *