উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: ভক্তদের কামনা-বাসনা পূর্ণ করে আশীর্বাদে ধন্য করছেন মা ধন্বন্তরী কালী। এমনটাই বিশ্বাস অনেকের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর মজিলপুরে অবস্থিত এই কালীমন্দিরটি প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন। দেবীর অলৌকিক শক্তির টানে আজও দূরদূরান্ত থেকে আসেন অসংখ্য ভক্ত, যাঁদের বিশ্বাস—এই মন্দিরে ধন্বন্তরী কালী মা স্বপ্নাদেশে পাওয়া ওষুধের মাধ্যমে নানা অসুখ সারিয়ে দেন।
মন্দিরটি জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনের অদূরে। স্টেশন থেকে পিচের রাস্তা ধরে অল্প হাঁটলেই দেখা মেলে দেবীর মন্দিরের। কথিত আছে, দেবীর স্বপ্নাদেশে তৈরি হয় বিশেষ ওষুধ, যা খেলে গ্যাস, অম্বলসহ নানা শারীরিক সমস্যার মুক্তি মেলে। এই কারণেই দেবীর নামকরণ হয় “ধন্বন্তরী কালী”—যেন স্বর্গের বৈদ্যরাজ ধন্বন্তরীরই রূপ।
ইতিহাস বলছে, রাজা প্রতাপাদিত্যর মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু শঙ্কর চক্রবর্তী পরিবারসহ দক্ষিণ যশোহরে (বর্তমান জয়নগর অঞ্চল) আশ্রয় নেন। সে সময় এলাকাজুড়ে জঙ্গল আর হিংস্র প্রাণীর আধিপত্য। সেই সময়ই তান্ত্রিক ভৈরবানন্দ সেখানে তপস্যা করছিলেন। চক্রবর্তী বংশের রাজেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ভৈরবানন্দ স্বপ্নাদেশ পান যে, আদি গঙ্গায় মা কালী অবস্থান করছেন। এরপর বুদ্ধপূর্ণিমার দিন আদি গঙ্গা থেকে কালীর কষ্টিপাথরের মূর্তি তুলে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয় বর্তমান মন্দিরে।
সেই সময় থেকে আজও বংশ পরম্পরায় চক্রবর্তী পরিবারই এই মন্দিরে পূজার্চনার দায়িত্ব পালন করছেন। মন্দিরের পুরোহিত কালিদাস চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিদিনই জেলার নানা প্রান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন রোগমুক্তির আশায়। মা ধন্বন্তরীর স্বপ্নাদেশে প্রাপ্ত ওষুধ খেয়ে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন।”
কালীপুজোর সময় মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সাধারণ সময়ে বলিদান প্রথা না থাকলেও, কালীপুজোর রাতে ছাগ বলির প্রথা রক্ষিত থাকে।
স্থানীয় ভক্ত সমীর ঘুরুই জানান, “এই কালী মা অত্যন্ত জাগ্রত। ভক্তি ভরে ডাকলে মা সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে শুধু আশীর্বাদ নিতে।”
এখন কালীপুজো উপলক্ষে জয়নগরের ধন্বন্তরী কালী মন্দিরে চলছে সাজসজ্জার ব্যস্ততা। আলো, ফুল ও নতুন রঙে সেজে উঠছে মন্দির প্রাঙ্গণ। প্রতি বছর যেমন, তেমনই এ বছরও কালীপুজোর রাতে বিশেষ পুজো দেখতে ভিড় জমবে হাজারো ভক্তের।










