দুর্গাপুর : দুর্গাপুরের শোভাপুরে আই কিউ সিটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়া গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হল বাকি দুই অভিযুক্ত।
এই নিয়ে এই ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই পাঁচজনই নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশের জালে ধরা পড়ল। রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে গ্রেফতার হওয়া দুজনের নাম হল শেখ নাসিরুদ্দিন ও শেখ সফিকুল। এই পাঁচজনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল নির্যাতিতাও তাঁর বয়ানে এই পাঁচজনের কথাই বলেছিলেন।
রবিবার তিনজনকে দুর্গাপুর আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতের নির্দেশে তারা বর্তমানে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। অন্যদিকে, বাকি দুজনকে সোমবার দুপুরে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হয়েছে। তাদেরকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। ধৃত শেখ নাসিরুদ্দিন ও শেখ শফিকুলের বাড়ি হাসপাতাল সংলগ্ন বিজরা গ্রামেই।
জানা গেছে, দুর্গাপুর নগর নিগমের অস্থায়ী কর্মী ধৃত নাসিরুদ্দিন শেখ। এদিকে, এদিন সকালে দুর্গাপুরে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি করেন, ধৃত নাসিরুদ্দিনের বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাডার। তাই আমার আর বলতে বাধা নেই যে, এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের কোনও না কোনও দিক থেকে যোগাযোগ রয়েছে।
এদিন সকালে শুভেন্দু দুর্গাপুরে এসে এক বিজেপি নেতার ফোনে প্রথমে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানতে চান, ডাক্তারি পড়ুয়া কেমন আছেন। এর পরে তিনি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কিছু বলতে চাইছেন না। তারা ভীত সন্ত্রস্ত রয়েছেন। তাদেরকে কিছু বলতে মানা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্যাতিতার বাবা-মাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলছে না। তার বাবা তো বলেছেন, মেয়েকে এখানে আর রাখবেন না। উনি তার মেয়ের জন্য যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার পাশে আমরা আছি। আমরা প্রথম থেকে তার পাশে আছি ও থাকবো।
শুক্রবার রাতের ওই ঘটনার সঙ্গে ধৃত নাসিরুদ্দিনের কি ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
প্রসঙ্গত, গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার রাতে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। রাত ৮টা নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে খাবার কিনতে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা ওই ডাক্তারি পড়ুয়া। তখন ওই ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, কলেজ থেকে কিছু দূরে পরাণগঞ্জে জঙ্গলের মনে টেনে নিয়ে গিয়ে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।
পরের দিন শনিবার সকালে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল হয়ে উঠে গোটা রাজ্য। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে রাজ্যের সবকটি বিরোধী দল ও একাধিক সংগঠন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার তদন্তে নামে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ।
পুলিশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, দ্রুতই দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। অভিযুক্তদের খোঁজে গোটা পরাণগঞ্জের জঙ্গল ঘিরে ফেলে শুরু হয় তল্লাশি। ড্রোন উড়িয়ে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়। রবিবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে কলকাতায় দমদম বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘটনায় জড়িতদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
পুলিশ তদন্তে নেমে একদিনের মধ্যে শনিবার রাতে তিনজনকে গ্রেফতার করে। রবিবার সকালে ধৃতদেরকে দুর্গাপুর আদালতে পেশ করা হয়। জামিন নাকচ তাদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর রবিবার সকালে দুর্গাপুর নগর নিগমের অস্থায়ী কর্মী নাসিরুদ্দিন শেখকে জঙ্গল এলাকা থেকে আটক করা হয়। সারাদিন টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাকে। প্রাথমিক তদন্ত ও সবকিছু খতিয়ে দেখে পুলিশের অনুমান, শেখ নাসিরুদ্দিন এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত ।
এই ঘটনায় মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । তার মধ্যে সবাইকেই গ্রেফতার করা হল।
তবে, এখনো পর্যন্ত ডাক্তারি পড়ুয়ার ভূমিকা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়। তাকেও দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। পরিষ্কার চিত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।










