কোলফিল্ড টাইমস: আসানসোলে ৩৫০ কোটি টাকার প্রতারণা কাণ্ডে ৫০০ গ্রাম গয়না সহ গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার ছেলে তহসিন আহমেদকে রবিবার সকালে আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়।
গোটা ঘটনার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পুলিশ তাকে ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করে। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক তার জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পরে ধৃত তহসিন আহমেদের আইনজীবী সৈয়দ ফারুক রেহান বলেন, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআরে ৫৪ লক্ষ টাকার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রেকর্ড বলছে তহসিন তারমধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছেন। এ ছাড়াও, পরে নগদে আরো ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৫০% টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী আরও বলেন, তহসিন কখনও বলেননি যে, তিনি জনগণের টাকা ফেরত দেবেন না। তিনি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতেন। তিনি একজন খুব বড় ব্যবসায়ী এবং এর জন্য তার লাইসেন্স রয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে, শেয়ার বাজারের পতন হচ্ছে। যে কারণে তিনি ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং মানুষের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না। তবে, তিনি জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার ইচ্ছা পোষণ করেননি।
সৈয়দ ফারুক রেহান গ্রেফতারের সময় তহসিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা গয়না নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তার দাবি, পুলিশ কি তহসিনকে প্রমাণ করতে বলেছিল যে, গয়নাগুলি কার মালিকানাধীন।
তিনি আরো দাবি করেন যে, তহসিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা গয়নাগুলি তার পরিবারের মহিলা সদস্যদের। যা তিনি সাধারণ মানুষের টাকা পরিশোধ করার জন্য বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। সৈয়দ ফারুক রেহান পুলিশের দেওয়া বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এদিন বিচারক তহসিনের জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশি রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, আসানসোল উত্তর থানার অন্তর্গত রেলপারের জাহাঙ্গীর মহল্লায় গত চার বছরের বেশি সময় ধরে “মাশাল্লাহ” নামে একটি ট্রেডিং কোম্পানির আড়ালে চিটফান্ড খুলে, চড়া সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে তহসিন আহমেদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে গত ২২ অক্টোবর আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে সে ফেরার ছিল।
এরপর তহসিন আহমেদকে শনিবার রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ১৯ নং জাতীয় সড়কের চন্দ্রচূড় মন্দিরের কাছে ৫০০ গ্রাম গয়না সহ গ্রেপ্তার করে। সে আসানসোল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি । তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার গ্রেফতারি নিয়ে মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছে।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস এদিন জানিয়েছেন, ধৃত তহসিনকে রবিবার সকালে আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়। তাকে পুলিশ হেফাজত বা রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তার জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, শনিবার রাতে পুলিশ তাকে চন্দ্রচূড় মন্দিরের কাছে ৫০০ গ্রাম গয়না সহ গ্রেফতার করা হয়। যখন সে পালানোর চেষ্টা করছিল।
এদিকে প্রতারিতদের মধ্যে আছেন অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক, মহিলা থেকে সাধারণ মানুষ। যারা সেই কোম্পানি বা চিটফান্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তারমধ্যে একজন ২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ অফিসার ৪১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেও রিটার্ন না পাওয়ার পরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই তহসিন আহমেদ তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদের ছেলে।
আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল সহ বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের যোগসূত্র থাকার দাবি করেছেন। তারা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে এই মামলার তদন্তের দাবি করেছেন।
রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অমিত মালব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। যেখানে তারা তহসিনের গ্রেপ্তার ও প্রতারিত হওয়া মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেছেন।
যদিও, তৃনমুল কংগ্রেসের তরফে এর দায় ঝেড়ে ফেলা হয়েছে। শাসক দলের নেতৃত্ব জানিয়েছেন, নেতার ছেলে কি করেছে, তার দায় দলের নয়। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ তাকে ধরে মামলা করেছে। আইন আইনের মতো চলবে।










