কাশ্মীরে জঙ্গি দমনের অভিযানে শহিদ বাংলার দুই প্যারা কমান্ডো — মুর্শিদাবাদের পলাশ ঘোষ ও বীরভূমের সুজয় ঘোষ। শুক্রবার কাশ্মীরের কিশতোয়ার রেঞ্জের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। চার দিন ধরে বরফে ঢাকা পাহাড়ের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের সন্ধান মেলে।
পলাশ ঘোষ মুর্শিদাবাদের রকুনপুর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা। সেনার এলিট প্যারা ৭ স্পেশ্যাল ফোর্সের হাবিলদার ছিলেন তিনি। পঞ্চমীতে ছুটি শেষে কাশ্মীরে ফিরে গিয়েছিলেন পলাশ। বিবাহবার্ষিকীতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণের পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। কিন্তু শনিবার সেই বাড়িতেই ফিরছে তাঁর কফিনবন্দি দেহ।
পরিবার জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে সেনার তরফে ফোনে মৃত্যুর খবর পান স্ত্রী বুল্টি ঘোষ। বাবা প্রশান্ত ঘোষ ও মা আদরী ঘোষ শোকে ভেঙে পড়েছেন। মা বলেন, “দেশ আমার ছেলেকে বীর শহিদ বলে চিনবে, এটা গর্বের। কিন্তু আমার কোল তো ফাঁকা হয়ে গেল।”
দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম পলাশের। ২০০৮ সালে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরিবার জানিয়েছে, পঞ্চমীতে ছুটি শেষে ফিরে গেলেও রোজ ফোনে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেন। শেষবার কথা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। তখনই বলেছিলেন, “কয়েক দিন কথা হবে না, বিশেষ অভিযানে যাচ্ছি।” এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।
অন্যদিকে, সুজয় ঘোষ বীরভূমের রাজনগর ব্লকের কুণ্ডীরা গ্রামের বাসিন্দা। সেনার এলিট প্যারা ৭ স্পেশ্যাল ফোর্সের ল্যান্স নায়েক ছিলেন তিনি। বছর সাতেক আগে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। শুক্রবার দুপুরে বাহিনীর থেকে ফোন আসে তাঁর বাড়িতে—প্রথমে বলা হয়েছিল, সুজয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, পরে আসে মৃত্যুর খবর। দাদু বামাপদ ঘোষ বলেন, “খুবই হাসিখুশি ছেলে ছিল। গ্রামে এলেই সবার সঙ্গে মিশে যেত। এমন পরিণতি মেনে নেওয়া যায় না।”
কাশ্মীরের অভিযানে প্রবল তুষারঝড় ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে নিখোঁজ হন পলাশ ও সুজয়। চার দিনের উদ্ধার অভিযানের পর তাঁদের দেহ মেলে।
দুই বীর শহিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, “জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদমন অভিযানে চরম আবহাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বাংলার দুই প্যারা কমান্ডোর। তাঁদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা। রাজ্য সরকার সব রকম সাহায্য করবে।”