কোলফিল্ড টাইমস: উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, মিরান হায়দার, গুলফিশা ফাতিমা এবং আরও কয়েকজন অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দিল্লি পুলিশ। পুলিশের দাবি, ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, এটা ছিল একটি “সরকার পতনের ষড়যন্ত্র” — দেশের শান্তি ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
হলফনামায় বলা হয়েছে, এই হিংসার ঘটনা ছিল সুনিয়ন্ত্রিত ও পূর্বপরিকল্পিত, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা নষ্ট করা এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করা।
এই পদক্ষেপ এসেছে দিল্লি হাইকোর্ট কর্তৃক অভিযুক্তদের ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act) মামলায় জামিন প্রত্যাখ্যানের পর। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২০ সালের ওই দাঙ্গায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন।
ট্রাম্পের সফরের সময়ে হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা
দিল্লি পুলিশের দাবি, হিংসার ঘটনাটি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছিল, যাতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এবং ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখোশে উগ্রবাদী প্ররোচনার হাতিয়ার” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
“গভীর ষড়যন্ত্রের প্রমাণ”
হলফনামায় বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে এমন সাক্ষ্য, ডিজিটাল প্রমাণ ও প্রযুক্তিগত তথ্য রয়েছে যা একটি “সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, সাম্প্রদায়িকভাবে প্রভাবিত ষড়যন্ত্রের” ইঙ্গিত দেয়।
তাদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করেছিলেন।
দিল্লি পুলিশ আরও জানিয়েছে, ইউএপিএ আইনের অধীনে এমন গুরুতর অপরাধে “জেলই নিয়ম, জামিন নয়”। পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্তরা এখনো পর্যন্ত নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের মতো কোনও যুক্তি দিতে পারেননি এবং শুধুমাত্র বিচারপ্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে জামিন দেওয়া যায় না।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সাক্ষীর সংখ্যা নিয়ে ভুল ধারণা ছড়ানো হচ্ছে — মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ জন সাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ এবং অভিযুক্তরা সহযোগিতা করলে বিচার দ্রুত শেষ করা সম্ভব।
ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত
পুলিশের অভিযোগ, অভিযুক্তরা “ভিত্তিহীন আবেদন” ও “সমন্বিত অ-সহযোগিতা”র মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। ফলে চার্জ গঠন ও বিচার শুরুতে দেরি হচ্ছে।
পুলিশের মতে, এই বিলম্বের জন্য অভিযুক্তরাই দায়ী, তদন্তকারী সংস্থা নয়।
জাতীয় প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি
দিল্লি পুলিশের দাবি, এই ষড়যন্ত্রের প্রভাব শুধু দিল্লিতে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং দেশজুড়ে একই ধরনের অস্থিরতা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দাঙ্গায় ৭৫০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং বিপুল সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে শীঘ্রই এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।










