উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, মথুরাপুর : আদিগঙ্গার তীরে, মথুরাপুর থানার অন্তর্গত সাতঘরা ঠাকুরজি গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন মা যজ্ঞেশ্বরী কালীর মন্দির। ইতিহাস বলছে, প্রায় চারশো বছর আগে জঙ্গলঘেরা এই শ্মশান চত্বরে এক তন্ত্রসাধক শিবানন্দ ব্রহ্মচারী প্রথম এখানে কালীসাধনা শুরু করেন। তিন চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরটি তাঁরই উদ্যোগে গড়ে ওঠে।
শিবানন্দ ব্রহ্মচারীর মৃত্যুর পর তাঁর সেবায় মন দেন এক সাধুনী, যিনি বছর পর বছর ধরে মায়ের পুজো চালিয়ে যান। পরবর্তীকালে স্থানীয় মানুষই সেই দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। আজও সেই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর কালীপুজো পালিত হয় ধুমধাম করে।
চারিদিকে এখন জঙ্গল না থাকলেও, মন্দির চত্বরে এখনো রয়েছে নির্জনতা ও গম্ভীরতা। আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বহু সমাধি—বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের, যাঁদের সমাধি এখানেই দেওয়া হয়। পাশেই চলে দাহকার্য। এই কারণে স্থানটি আজও বহন করছে এক রহস্যময় শ্মশান-আবহ।
মন্দির কমিটির সদস্য প্রদীপ সরদার জানিয়েছেন, “প্রতি কালীপুজোয় এখানে প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার ভক্তের সমাগম হয়। দূরদূরান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরাও আসেন। তাঁরা যজ্ঞ করেন, চলে ভোগ বিতরণ ও সারারাতব্যাপী পুজো।”
পুজোর সময় পুরো গ্রাম একসঙ্গে মেতে ওঠে মায়ের আরাধনায়। মন্দির সেজে ওঠে আলোয় ও ফুলে, আর রাতভর ধ্বনিত হয় ঢাক, শঙ্খ ও মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ।
আদিগঙ্গার পাড়ে গা-ছমছমে পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা মা যজ্ঞেশ্বরী মন্দির শুধু এক প্রাচীন তন্ত্রসাধনার কেন্দ্রই নয়, পাশাপাশি আজও মানুষের বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ভক্তির প্রতীক।










