Press "Enter" to skip to content

সিআইএসএফের তাড়া খেয়ে পরিত্যক্ত খনির ১২০ ফুট নিচে পড়ে যায় যুবক, ১৫ ঘন্টা পরে দেহ উদ্ধার

জামুড়িয়া : কয়লাখনির ১২০ ফুট গভীরে পড়ে এক যুবক। এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য।

আসানসোলের জামুরিয়া থানার কুনুস্তোরিয়া এরিয়ার নর্থ শিয়ারসোল খোলা মুখ খনির অদূরে শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটে।

অভিযোগ, এক পরিত্যক্ত অবৈধ কয়লা খনির কাছে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে থাকা সিআইএসএফের তাড়া খেয়ে ছুটে পালাতে গিয়ে খনির গহ্বরের প্রায় ১২০ ফুট গভীরে পড়ে যায় এক যুবক।

বছর ৩৮ র রানিগঞ্জ থানার মহাবীর কোলিয়ারির যাদব পাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের নাম ভীষম রায়। প্রায় ১৫ ঘন্টা পরে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ স্থানীয় এক যুবকের তৎপরতায় কয়লাখনির ভেতর থেকে ভীষম রায়কে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেখানে এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিন সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ থেকে ইসিএলের মাইন্স রেসকিউয়ের দল সন্ধান চালালেও তার খোঁজ মেলে নি । তবে তার আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা বিপদ গোপ নামে এক যুবক দুপুর তিনটে নাগাদ নিজে প্রায় ওই কয়লাখনির ১০০ ফুট গভীরে নেমেছিলেন। সে দেখে একটা সাইকেল ওই খনির ভেতরে একটি জায়গায় আটকে আছে। সেই সাইকেলটিকে পরে সে দড়ি দিয়ে উপরে তুলে আনে। উপরে উঠে এসে সে জানায় প্রচুর পরিমাণ নীচে জল আছে ওই কয়লাখনির ভেতরে ।

শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শেখ সাজ্জাদ নামে এক স্থানীয় যুবক সকলের অনুমতি নিয়ে এবং অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ১২০ ফুট গভীরে ওই পরিত্যক্ত খনির ভেতরে নামে। সে সঙ্গে নিয়ে যায় বেশ কয়েকটি মুখওয়ালা লোহার কাঁটা। জলের চারিদিকে ওই কাঁটা দিয়ে সে ঘাটতে থাকে। তখনই একটা কাঁটাতে ঘাটতে ঘাটতে পড়ে যাওয়া যুবক আটকে যায়। তারপর দড়ি দিয়েই তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপরে তোলা হয়।

প্রাথমিকভাবে সেখানে তাকে এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ।

অন্যদিকে, ইসিএলের মাইনস রেসকিউয়ের টিম সন্ধে ছটার সময় নিচে থেকে দুটি লোহার সিড়ি যা খনির ভিতর বহুদিন ধরে ছিল তা উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কিন্তু তারা নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারেনি। মনে করা হচ্ছে, কয়লা চোরেরা সম্ভবত ওই দুটি সিঁড়ি দিয়ে কয়লা কাটতে কয়লাখনিতে নামতো ।
এদিন সকালে এই ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এই ঘটনার জন্য ইসিএলকেই দায়ী করে রীতিমত বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন । খবর পেয়ে আসে রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ি ও জামুরিয়া থানার পুলিশ। আসে রানিগঞ্জ দমকলের একটি দলও । প্রায় চার ঘণ্টা পরে স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে বারবার অভিযোগ পেয়ে ইসিএলের এক আধিকারিক এলাকায় আসেন। দুপুরে আসে ইসিএলের খনি থেকে উদ্ধারকারী একটি দল ।যেহেতু এলাকাটি খুবই বিপজ্জনক ও গভীর, সেকারণে উদ্ধারকার্যে সমস্যা হয়।

এদিকে খবর পেয়ে এলাকায় এসে পৌঁছান আসানসোল পুরনিগমের রানিগঞ্জের ৩৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রানিগঞ্জ শহর তৃণমূল ব্লক সভাপতি রুপেশ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির স্থানীয় নেতা লালু মাজি সহ আরো অনেকে। এই ঘটনার পরে ওই এলাকা থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকা নর্থ শিয়ারসোল খোলা মুখ খনির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ।

রূপেশ যাদব বলেন, ইসিএলের গাফেলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে। দেখে মনে হয়েছে ১০-১২ বছর আগে এই অবৈধ খনি থেকে কয়লা তোলার পর তা ভরাট করা হয়নি । এটা ছাড়াও এখানে আরো কয়েকটি এমন খোলা অবস্থায় খনি পড়ে আছে । অবিলম্বে এই গুলো ভরাট করা উচিত ইসিএলের। স্থানীয় মানুষজনেরা আমাকে জানিয়েছে, এর আগে এখানে গরু ছাগল পড়ে মারা গেছে। ইসিএল এলাকায় এরকম কেন এমন পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি খোলা অবস্থায় থাকবে? এগুলি অন্তত তারকাটা দিয়ে ঘিরে ফেলা উচিত। শুনেছি সিআইএসএফ নাকি এই এলাকার রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ওই যুবককে তাড়া করে। ভয়ে সে পালাতে গিয়ে পড়ে যায় ।

এই ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা রাজু রায় নামে একই এলাকার আরো একজন বলেন, আমরা একসাথেই যাচ্ছিলাম। আচমকা সিআইএসএফ তাড়া করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়। আমি পালিয়ে যাই। পরে শুনি ও নাকি ওখানে পড়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে যে যাতায়াত করা যায় না এরকম কিছু কোথাও লেখা নেই কিন্তু।

জামুরিয়া থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে সৌমেন্দ্রনাথ সিংহ ঠাকুর ইতিমধ্যেই জামুরিয়ায় এমন ৭২টি পরিত্যক্ত খনির বিষয়ে ইসিএলকে চিঠি দিয়ে ভরাট করার কথা জানান। তার দাবি, এটা সম্পূর্ণ ইসিএলের দায়িত্ব।

ইসিএলের এক আধিকারিক বলেন, অবৈধ খনি গুলি তারা ভরাট করে দিচ্ছেন। কিন্তু তা করে দেওয়ার পরেও মাঝেমধ্যে আবার কয়লা চোরেরা তা খুলে ফেলে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে ঠিক কি হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *