আসানসোল : চার বছর আগে আসানসোলের সালানপুর থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল। মানসিক ভারসাম্যহীন বছর কুড়ি-একুশের এক যুবতীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হল এক যুবক। শনিবার আসানসোল আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ বা এডিজে ( দ্বিতীয়) তানিয়া ঘোষ সালানপুরের বাসিন্দা রবি তুড়ি ওরফে গুটু নামে ওই যুবক মামলার শুনানির শেষ দিনে ভারতীয় দণ্ডবিধির বা আইপিসির ৩৭৬ নম্বর ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন।
আগামী সোমবার বিচারক যুবকের সাজা বা শাস্তি ঘোষণা করবেন বলে এই মামলার সরকারি আইনজীবী বা পিপি তাপস উকিল জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এই মামলা চলাকালীন আদালতে তিন চিকিৎসক সহ মোট ১৫ জন সাক্ষ্যদান করেছেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুবক এখন জেলেই আছে। পুলিশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ায় যুবক জামিন পায়নি। সেক্ষেত্রে তার কাস্টডি ট্রায়াল হয়েছে।
সরকারি আইনজীবী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১১ জুলাই হঠাৎ করে সালানপুরের বাসিন্দা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবতীর পেটের ব্যথা শুরু হয়। তখন তাকে তার মা এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তখন চিকিৎসক পরীক্ষা করে বলে, যুবতী ৪/৫ মাসে অন্তঃসত্ত্বা। তখন মা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন ও জানতে চান, কে এই কাজ করেছে? পরে যুবতী বলে এলাকারই বাসিন্দা রবি তুড়ি ওরফে গুটু তাকে জোর করে বাড়ির অদূরে রেললাইনের পাশে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। এরপর সেদিনই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে যুবতীর মা সালানপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ওই রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে, তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৬ নং ধারায় ধর্ষণের মামলা করে। যুবতীকে আসানসোল জেলা হাসপাতালের গাইনোকলজিস্ট বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেন। এরপর যুবতীর মানসিক অবস্থা ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ ডিপি রায় চৌধুরী তার পরীক্ষা করেন। তিনি তার রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি যুবতীর ” আইকিউ ” পরীক্ষার জন্য আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগে রেফার করেন। সেখানে দুই এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর যুবতীর পরীক্ষা করেন।
তারা রিপোর্টে বলেন, যুবতীর ” আইকিউ ” খুবই কম। পরবর্তী কালে ওই যুবতী মৃত সন্তান প্রসব করেন। আদালতের নির্দেশে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ওই সদ্যজাতর ময়নাতদন্তের সময় রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের রক্তের নমুনা নিয়ে সদ্যজাতর রক্তের নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। তাতে মিল পাওয়া যায়। সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়। যা অভিযুক্ত যুবকের দোষ প্রমাণের বড় হাতিয়ার হয়।
শেষ পর্যন্ত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলা চলাকালীন চিকিৎসকদের রিপোর্ট, তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য দান শেষে শনিবার বিচারক যুবককে দোষী সাব্যস্ত করেন বলে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন।




Be First to Comment