Press "Enter" to skip to content

কুলটিতে দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস, বিজেপি কর্মীর অনশন তুললেন দলের দুই বিধায়ক ও জেলা সভাপতি

অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা, কুলটি ( আসানসোল) : লোকসভা ভোটের মুখে আসানসোলের কুলটিতে বিজেপির এক নেতা ও এক কর্মীর মধ্যেকার বিবাদ মেটাতে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এল সাংগঠনিক জেলা কমিটি। দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সেই বিবাদ মেটানোর দাবিতে গত ৬ দিন ধরে স্ত্রী সুনীতা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে অনশন করছিলেন বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিং। শনিবার বিকেলে সেই অনশন মঞ্চে আসেন আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটির দুই বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও ডা. অজয় পোদ্দার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ রায়, সহ-সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী।

এদিকে, এই অনশন চলাকালীন শুক্রবার অসুস্থ হয়ে যান সুনীতাদেবী। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে শাঁকতোড়িয়া হাসপাতালেন ভর্তি করা হয়েছে। এদিন গোটা বিষয়টি নিয়ে অনশন মঞ্চে জেলা নেতৃত্ব ও দুই বিধায়ক পবনের সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেন। গোটা বিষয়টি দল গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে আশ্বাস দিয়ে তাঁকে অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করেন।

তাঁরা পবন সিংকে ফলের রসও খাওয়ান। এরপর বিধায়ক চিকিৎসক অজয় পোদ্দার তাঁকে পরীক্ষা করেন । তিনি তাঁকে অনশন তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এরপর তাঁকেও শাঁকতোড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে বিজেপি কর্মীর অনশন মেটাতে অনশন মঞ্চে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎই হাজির হয়েছিলেন বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়। বিজেপি নেতা তথা আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন কাউন্সিলার অভিজিৎ ওরফে বাপ্পা আচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে স্বস্ত্রীক ওই বিজেপি কর্মী অনশনে বসেছেন গত ১৮ মার্চ থেকে ।

মেয়র ওই বিজেপি কর্মীকে ফলের রস খাওয়ান ও অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন করেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে কুলটির মতো জায়গায় বিজেপি কর্মীর অনশন মঞ্চে মেয়রের আসা রাজনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে মেয়র দাবি করেছিলেন, একেবারে মানবিকতার কারণে তিনি এসেছেন । কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গে আছেন। অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন ।

জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুলটির শাঁকতোড়িয়ায় বাসিন্দা বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিং ঋণ নিয়ে নিজের বাড়ি তৈরি করছিলেন গত ২৯ জানুয়ারি। বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিংয়ের স্ত্রী সুনীতা দেবীর অভিযোগ, বাড়ি তৈরীর জন্য তাঁদের কাছে স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রাক্তন কাউন্সিলার অভিজিৎ আচার্য্য ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। তাঁর স্বামীকে অভিজিৎ আচার্য্য নিজের কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। সেখানে তার স্বামী গেলে তাকে মারধর করে। তারপর তাঁকেই পুলিশে অভিযোগ করে গ্রেফতার করায় বলে অভিযোগ।

সুনীতাদেবীর আরও অভিযোগ, এরপর তাঁদের বাড়ি ওই নেতার কথায় ভেঙে দেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনা ও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ আচার্য্য।

এরপর পবন কুমার সিং ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে অনশন মঞ্চ তৈরি করে অনশনে বসেন ন্যায় বিচারের দাবিতে। পবন কুমার সিংয়ের অভিযোগ ছিলো, তাদেরকে অভিজিৎ আচার্য্যর আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দিচ্ছে।

ওই বিজেপি কর্মীর দাবি ছিল, “বিষয়টি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁরা কি ব্যবস্থা নেয় দেখি, তার পর তারা অনশন তুলব ।” কারণ তিনি যেমন বিজেপি কর্মী। আর যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনিও বিজেপি নেতা!
তাই বিষয়টি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নেন, তা দেখা পর্যন্ত আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত এই অনশন চালিয়ে যাবেন ।

এদিন ওই কর্মী বলেন, “যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা আমাকে দলের তরফে ওই নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তাতে আশাবাদী। দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।”

তবে যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সেই বাপ্পা আচার্য বলেন, “পবন সিংয়ে বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। ওর করা মামলায় আমি কলকাতার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছি। আর তৃণমুল কংগ্রেস সেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ওই দলটা শেষের মুখে। এই সময় ওই দলের নেতা নাটক করতে এসেছিলেন।”

তাঁর দাবি, “এই এলাকার মানুষ জানেন যে, অভিজিৎ আচার্য্য সব জিনিসে রাজনীতি করে না।”

এদিকে, এদিন বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই অভিযোগ আসার পর আমি জেলার দশজন নেতৃত্বকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করি। তাদের দিয়ে দুপক্ষের সাথে কথা বলে জেলার তরফে একটি তদন্ত রিপোর্ট রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছি। আমি নিজেও জেলা নেতৃত্ব ও দুই বিধায়ক সহ এদিন পবন সিংয়ের কাছে এসেছি। যে ঘটনা ঘটেছে, তা একবারেই অনভিপ্রেত। তা হওয়া উচিত ছিল না। আইন মেনে যা হওয়ার তা হবে। তবে দলও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দোষ করে থাকলে তার শাস্তি হবে।”

রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, এই ঘটনা ঠিক হয়নি। তা যে বা যাঁরা করে থাকুন না কেন।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *