উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুন্দরবন: বনবিবির মন্দিরে পুজো দিয়ে এ বারের মধু সংগ্রহে নামলেন সুন্দরবনের মউলেরা। এ বারে বন দফতর থেকে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনই বাড়ানো হয়েছে মধুর দাম। যার ফলে খুশি মধু সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত সুন্দরবনের মউলেরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদফতর ও ব্যাঘ্র প্রকল্প মিলিতভাবে মধু সংগ্রহের কাজ করে থাকে। তবে আলাদা আলাদা ভাবে অনুমতিপত্র জমা নিয়ে তবেই জঙ্গলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনদফতরের তরফ থেকে। আগামী এপ্রিলের ৫ তারিখ থেকে শুরু হবে ব্যাঘ্র প্রকল্পে মধু সংগ্রহের কাজ। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার থেকে সুন্দরবনের বনদফতরের অধীনে থাকা জঙ্গলগুলিতে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হল।
বনদফতরের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই সেই সমস্ত মধু সংগ্রহকারীদেরকে দেওয়া হয়েছে অনুমতিপত্র। ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীন বনদফতরের মিলিয়ে এবছর প্রায় ১৫০টি নৌকাকে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। আর বনদফতরের তরফ থেকেই ইতিমধ্যেই ৯১টি দলের ৪৩০ জনকে এই মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে।
এ বারে বাড়ানো হয়েছে মধুর সরকারি দামও। গত বছর ২৬৫ টাকা কেজি প্রতি দাম থাকলেও এ বছর তা কেজি প্রতি ৩০০ টাকা করা হয়েছে। ১০ মেট্রিক টন মধুর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে এ বারে বনদফতরের এলাকাতে। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে কেউ বাঘের আক্রমণে নিহত হলে ২ লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতি পূরণের কথা বন দফতরের তরফ থেকে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বন আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, সব মিলিয়ে গত বছর ১৭ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছরও ১০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলো তা যথেষ্ট বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। মধুচুরি রুখতে এবং ডাকাতদের হাত থেকে মউলেদের রক্ষা করতে অতিরিক্ত বনদফতরের কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকাগুলিতে। ব্যাঘ্র প্রকল্পে আগামী সপ্তাহে শুরু হবে এই কাজ। দুটি ধাপে দেওয়া হবে মধু সংগ্রহের অনুমতিপত্র। সজনেখালি এবং বাগনা রেঞ্জ অফিস থেকে এই অনুমতিপত্র পাবেন মধু সংগ্রহকারীরা।
ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের মধু জিআই ট্যাগ পেয়েছে। আর তাঁর পরে বনদফতর এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পে মধুর দাম বাড়ানোয় খুশি সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারীরা। তাঁরা বলেন, মধু সংগ্রহ করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টের কাজ। তাই এই দাম বাড়ায় যথেষ্টই খুশি আমরা। আশা করছি এ বারে লক্ষ্যমাত্রা অধিক মধু সংগ্রহ করতে পারবো আমরা। মধু সংগ্রহ করার পর প্রতিটি নৌকাকে বনদফতরের অফিসে নিয়ে আসতে হয়। সেখানে মধু ওজন করে তাদেরকে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। তবে সরকারি ভাবে আগে মোম কেনার ব্যবস্থা থাকলেও এখন মোম কেনা হয় না।বনদফতরের তরফ থেকে অনুমতি পত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া হচ্ছে মুখোশ, স্যানিটাইজার, গ্লাভস-সহ একাধিক সরঞ্জাম।
Be First to Comment