এই সেই সুলভ শৌচাগার। নিজস্ব ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: বছর তিনেক আগে জনসাধারণের জন্য তৈরি হওয়া সুলভ শৌচাগার আজ একজন তৃণমূল কর্মীর দখলে। অবশ্য এমন ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ক্ষুব্ধ। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্য প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক তৃণমূলের নেতা বলেন, “আমরা সব দেখেও চুপ করে থাকতে হচ্ছে। না হলে দলের চক্ষুশুল হতে হবে। আর এইসব দুষ্কৃত শ্রেণীদের জন্যই দলের ক্ষতি হচ্ছে, বদনাম হচ্ছে ।”
উল্লেখ্য, বছর তিনেক আগে দুর্গাপুরে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত সুকান্তপল্লী মোড়ে একটি সুলভ শৌচাগারের ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু জলের ব্যবস্থা না হওয়ায় শৌচালয়টি চালু করা যায়নি । সম্প্রতি ওই শৌচাগার ভবনের জানলাগুলি ইট গেঁথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, দরোজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়াও হয়েছে |
এইভাবেই শৌচাগার ভবন দখল করে রেখেছে, এমনি অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় মানুষ | এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ।
স্থানীয় মানুষজনদের বক্তব্য, দুর্গাপুরের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লি মোড়ে একটি সুলভ শৌচাগার ভবন তৈরি করা হয়েছিল। দুর্গাপুর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং ৪ নম্বর বোরো’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিভিন্ন কাজে এবং দৈনন্দিন রোজগারের জন্য প্রতিদিন সকালে দুর্গাপুর ব্যারেজের ওই পাড় বাঁকুড়া থেকে হাজার হাজার মানুষ দুর্গাপুর শহরে আসেন ।
তিনি বলেন, ওই সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের এবং সাধারণ মানুষদের সুবিধার কথা বিবেকের সঙ্গে চিন্তা করে তিনি বোরো চেয়ারম্যান থাকাকালীন স্থানীয় একটি বেসরকারি কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য | সেই অনুরোধের ভিত্তিতে ওই বেসরকারি কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদের সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ওই শৌচাগারটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত হয়, দুর্গাপুর পুরসভা ওই শৌচাগারটি পরিচালনা করবে।
সেই অনুযায়ী ২০২১ নাগাদ ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০-র শেষ দিকে চন্দ্রশেখরবাবু কাউন্সিলর এবং বোরো চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন।
চন্দ্রশেখরবাবুর অভিযোগ, শৌচাগার ভবনটির নির্মাণের কাজ শেষ হলেও পুরসভা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শৌচাগারটি চালু করতে উদ্যোগী হয়নি । অথচ, ওই ভবনের মাথায় বোর্ড লাগিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন,۔কিছু দিন হল, ইট গেঁথে শৌচাগারের জানলাগুলি বন্ধ করে, দরজায় তালা দিয়ে দখল করে রেখেছে একজন তৃণমূল কর্মী।
স্থানীয়দেরও একই দাবি, এলাকারই তৃণমূলের এক যুবক ভবনটি তালাবন্ধ করে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন । চন্দ্রশেখর বলেন, আমি বহুবার পুরসভার কাছে অনুরোধ করেছি ওই শৌচাগারটি চালু করার জন্য । কিন্তু পুরসভা তা কর্ণপাত করেনি | চদ্রশেখরবাবু প্রশ্ন তুলেন, ওই শৌচাগার ভবনটি কি কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ?
অন্যদিকে, ভারতীয় মজদুর সংঘ ( বিএমএস ) এই নিয়ে পুরসভার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।
বিএমএসের তরফে অর্কপ্রভ রায় বলেন, পুরসভার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে জানতে চেয়েছি, কেন শৌচাগারটি চালু করা হচ্ছে না । এ ছাড়া ভবনের চাবি পুরসভার কোন বিভাগে জমা আছে, তা-ও জানতে চেয়েছি।
এদিকে পুরসভার তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
Be First to Comment