Press "Enter" to skip to content

রিভলভার আসল না নকল দেখতে গিয়ে বিপত্তি, গুলি ছিটকে প্রাণ গেল স্কুল পড়ুয়ার

বার্নপুর : পাড়ার এক বাসিন্দা বন্ধুর হাতে ছিল দেশি রিভলভার। তা আসল না নকল, দেখতে গিয়ে টানাটানিতে সময় বেরিয়ে গেলো গুলি। আর সেই গুলিতে প্রাণ গেলো দ্বাদশ শ্রেণির এক স্কুল পড়ুয়ার।

বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের ধ্রুব ডাঙ্গাল রেল ক্রসিংয়ের কাছে। এমন ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই হিরাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছান, সাথে ছিলেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি ( হিরাপুর) ঈপ্সিতা দত্ত সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকরা।

জানা গেছে, মৃত স্কুল পড়ুয়ার নাম আদিত্য মণ্ডল (১৯)। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ধ্রুবডাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা আনমোল নামে এক যুবককে আটক করেছে। তবে, যার সঙ্গে থাকা দেশী রিভলভার থেকে গুলি ছিটকে এই ঘটনা ঘটেছে সেই গণেশ সাউ ওরফে ব্রেটলি নামে এক যুবক ফেরার হয়ে যায় । তার খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের ধ্রুবডাঙ্গালের বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার দাদা অলোক মন্ডল। হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন একটা গুলি আদিত্যর ডান চোখের নিচে লাগে ও তা কানের পাশ দিয়ে বেরিয়েও গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়।

রাতেই বাড়ির লোকেরা তাকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে শুক্রবার সকালে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্সে সে অচৈতন্য হয়ে যায়। দুপুরে তাকে আসানসোলের জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মৃত যুবকের দাদা অলোক মণ্ডল সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি ও তাঁর ভাই বৃষ্টির জন্য ধ্রুবডাঙ্গাল রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের কাছ দাঁড়িয়েছিল । তাদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো ওই এলাকারই বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক গণেশ সাউ ওরফে ব্রেটলি ও আনমোল নামে এক যুবক। গণেশের কাছে একটি দেশী রিভলভার ছিল । আনমোল সেই রিভলভার দেখে উৎসাহি হয়ে টানাটানি করে জানার চেষ্টা করছিল, তা আসল না নকল। অনবধানতায় টানাটানিতে সেই রিভলভার থেকে একটি গুলি বেরিয়ে যায়। সেই গুলি একদম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদিত্যর ডান চোখের নিচে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পালিয়ে যায় গণেশ ও আনমোল।

অলোক সেই ঘটনার কথা বাড়ির লোকদের জানান। গুলির শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকেরাও দৌড়ে আসেন। রাত এগারোটা নাগাদ খবর পেয়ে হিরাপুর থানার পুলিশ এলাকায় আসে।
আদিত্য মন্ডলের মা নির্মলা মণ্ডল বলেন, ছোট ছেলে আদিত্য বার্নপুরের বারি বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। পাশাপাশি সে একটা সাইবার কাফেতে কাজ করত। অলোক মলে কাজ করত। দুভাই কাজ শেষ করে রাত দশটার পরে একসঙ্গে বাড়ি আসতো। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া দশটা নাগাদ ওদের ফোন করি। তখন আমাকে বলে দশ মিনিটের মধ্যে বাড়ি আসছি। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি আদিত্যর গুলি লেগে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পরে জানতে পারি বন্দুকটা গণেশ সাউ ওরফে ব্রেটলির। সঙ্গে ছিল আনমোল। তার দাবি, এই দুজন আমার ছেলের বন্ধু নয়। তাই বুঝতে পারছি না ওরা একসঙ্গে কি করছিল। রাতেই তিনি গণেশের বাড়িতে যান ও ছেলের জন্য তাকে দায়ী করে বিক্ষোভও দেখান।

অন্যদিকে, গণেশের মা সুশীলা দেবী বলেন, রাত দশটার সময় খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। পরে জানতে পারি এই ঘটনা। তার দাবি, রিভালভারটি ছেলের নয়। ও রাজেশ সিংয়ের গাড়ি চালক। রিভালভারটি রাজেশের। ছেলের কাছে থাকতো। ছেলে কোথায় গেছে বলতে পারবো না। মাঝেমধ্যে সে বাড়ি আসতো।

এই ঘটনা নিয়ে এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রিভলভারটি টানাটানি করার সময় কোনও ভাবে তার থেকে গুলি ছিটকে বেরিয়ে যায়। তাতে আদিত্য মন্ডল গুলিবিদ্ধ হয়। এদিন সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। যার হাতে রিভলভারটি ছিল সে পালিয়েছে। তার খোঁজ করা হচ্ছে। এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তাকে জেরা করা হচ্ছে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *