দুর্গাপুর :দুই বছর ধরে প্রশাসক বসিয়ে দুর্গাপুর পুরসভা চলছে । এবার দুর্গাপুরে পুরসভা নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে, কিন্তু চিন্তা বাড়াচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফল ।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ভোটে দিলীপ ঘোষকে পরাজিত করার পরেও দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩ টি ওয়ার্ডে বিজেপি থেকে পিছিয়ে তৃণমূল । আর এই ফলাফলকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দর মহলে, তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মধ্যে । দলের অন্দর মহল থেকেই দাবি তোলা হয়েছে, দলের ব্লক সভাপতি এবং ওয়ার্ড সভাপতিদের অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া হোক। তা না হলে দুর্গাপুর পুরসভার ভোটের ফল তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাবে ।তাছাড়া ২০১৭ সালের নির্বাচনের মতো পুনরাবৃত্তি করতে হবে ।সেবার মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয় নি, একপ্রকার ভোট লুট করে দুর্গাপুর পুরসভা দখল নেয় তৃণমূল ।সেই ক্ষোভের আগুনে আজও জ্বলছে দুর্গাপুর পশ্চিমের মানুষ । তাই এখানে তৃণমূলকে বারবার হারতে হয় ।
অন্যদিকে দলের সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক রদবদলের নির্দেশ দিয়েছেন।দুর্গাপুর শহরের তিনটি ব্লকের মোট ৪৩ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩ টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। আর এই ফল দেখেই দুর্গাপুরের ব্লক সভাপতি ও ওয়ার্ড সভাপতিদের সরানোর দাবীতে শোরগোল পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।

কীর্তি আজাদের জয়ের পরেও দুর্গাপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে দুর্গাপুর পুরসভার নির্বাচন করার । আর তার পরেই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজার ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস । আর দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের অন্তর্ভুক্ত দুর্গাপুর নগর নিগমের যে কটি ওয়ার্ড রয়েছে সেই সমস্ত ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে পিছিয়ে তৃণমূল ।
লোকসভা নির্বাচনের দলের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস শহরের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ওয়ার্ড ধরে ধরে ‘হিসাব’ চান।অথচ সেখানে সবাই বড় মার্জিনে জেতার কথা বললেও আদতে ফল হয়েছে উল্টো।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দুর্গাপুর পূর্বের থেকে বেশি হাল খারাপ দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভায়। পশ্চিম বিধানসভায় মোট ওয়ার্ড ২৭ টি। এর মধ্যে মাত্র ৫ টি ওয়ার্ড ১২, ১৪, ৩১, ৩৫ ও ৪১ নম্বরে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার মধ্যে রয়েছে ১৬টি ওয়ার্ড। সেখানে ১, ২, ৩, ২৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে তৃণমূল।
প্রাক্তন মেয়র ও বর্তমানে দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩৫১ ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল।এই প্রশাসকমণ্ডলীর ৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রাখি তিওয়ারি ১৭০৭ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে দীপঙ্কর লাহা ৩৯১ ভোটের লিড দিতে পেরেছেন। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৯৬৯ ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
অন্যদিকে, দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বনিম্ন ৩৯ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে শাসকদল। বিজেপি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৮৯২ ভোটে এগিয়ে রয়েছে।যে সমস্ত ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে পড়েছে, সেই সব ওয়ার্ডে পুরভোটের আগে আমূল সাংগঠনিক রদলবদলের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব।
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এই বিষয়ে বলেন, “আমাদের কিছু সাংগঠনিক ব্যর্থতার জন্যেই পুর এলাকায় খারাপ ফল হয়েছে। পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। ভোটের আগেই দুর্বলতা মেরামত করা হবে।”



Be First to Comment