অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা, আসানসোল: দীর্ঘ ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে দাবিদার নিয়ে টানাপোড়েন শেষ হল বুধবার বিকেলে। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়ের চিঠিতে এ দিন বিকেলে স্বামী বিশ্বনাথ দে’র মৃতদেহ হাতে পেলেন স্ত্রী শুক্লা দে। তবে এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্লা দে ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পুলিশের বিরুদ্ধে মৃতদেহ দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করা ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, কারোর প্ররোচনাতেই পুলিশ তাঁদেরকে অযথা হয়রানি করছে। তাঁদের দাবি, ময়নাতদন্তের জন্য কাগজে সই করানোর পরেও, মৃতদেহ দেওয়ার জন্য কাউন্সিলারের সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে। যা পুলিশ চাইতে পারে না। কেন না, আইনগত ভাবে এখনও শুক্লা দে মৃত বিশ্বনাথ দের স্ত্রী। পারিবারিক কারণে তারা হয়তো গত ৬ বছর ধরে এক সঙ্গে থাকেন না। আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু দুজনের মধ্যে তো কোনো বিচ্ছেদ হয়নি। তা হলে কিসের ভিত্তিতে বিশ্বনাথ দের মৃতদেহের দাবিদার তাঁর মা ও ভাইয়েরা হয়?
এদিন দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে বিশ্বনাথ দের মৃতদেহর ময়নাতদন্তের জন্য সুরতহাল বা ইনকোয়েস্ট করতে আসা আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ অফিসারকে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
প্রসঙ্গত, আসানসোল পুরনিগমের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আসানসোল শহরের জিটি রোডের গোধূলি বাইলেন সমীরণ রায় রোডের বাসিন্দা বছর ৬২ বিশ্বনাথ দে গত সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষার পর মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের তরফে পুলিশকে সেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পরিবার ও পুলিশকে বলা হয়। সেই মতো মঙ্গলবার আসানসোল জেলা হাসপাতাল ওই ব্যক্তির স্ত্রী, বছর ২০ র ছেলে সহ অন্যরা আসেন। একইভাবে ওই ব্যক্তির ভাই অমিত দে সহ অন্যরা হাসপাতালে এসে বলেন, তারা মৃতদেহ নেবেন। তার কারণ হিসাবে বলা হয়, বিশ্বনাথ দের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী থাকেন না। ছেলেকে নিয়ে তিনি অন্যত্র থাকেন।
এই টানাপোড়েনে মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত হয়নি। বুধবার সকালে একই পরিস্থিতি তৈরি হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। একদিকে শুক্লা দে, তার ছেলে এবং পরিবারের সদস্যরা আসেন। অন্যদিকে বিশ্বনাথ দের বৃদ্ধা মা কানন দে’কে নিয়ে হাজির ভাইয়েরা।
পুলিশ অফিসার ময়নাতদন্তের জন্য স্ত্রী ও ছেলেকে সই করিয়ে নেন। দুপুরের মধ্যে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়ে যায়। কিন্তু এরপর পুলিশ অফিসার শুক্লা দে’কে বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলারের চিঠি ছাড়া মৃতদেহ দেওয়া যাবে না।
থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জের এমনটাই নির্দেশ আছে।
এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শুক্লা দে ও তার পরিজনেরা। তারা জানতে চান, এই কথা আগে তাদেরকে বলা হয় নি কেন? আমরা তো মঙ্গলবারই বলেছিলাম ওয়ার্ল্ড কাউন্সিলার আমনা খাতুন সার্টিফিকেট দেবেন না। তাহলে তাদেরকে মৃতদেহ দেওয়া হবে বলে, কেন সই করানো হল?
পুলিশ তাঁদেরকে অহেতুক হয়রানি করছে বলে, আদালতে যাওয়ার হুমকি দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
শুক্লা দে গোটা বিষয়টি আসানসোলের পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়কে জানান।
এদিকে, অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ জানায়, যে কোন জনপ্রতিনিধির চিঠি হলেই, তারা মৃতদেহ দিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত মেয়র পারিষদের চিঠিতে এদিন বিকেল চারটের পরে শুক্লা দে’কে মৃতদেহ দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে, আইনগত দিক থেকে তারা যে মৃতদেহ পাবেন না, তা বুঝতে পেরে দুপুর নাগাদ জেলা হাসপাতাল থেকে চলে যান বিশ্বনাথ দের মা ও ভায়েরা। তবে তাঁরা দাবি করেন যে, কী ভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, তা তাঁরা জানতে চান।
এই প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, মৃতদেহ কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তা মিটে গেছে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ নিয়ে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
আরও পড়ুন: আসানসোল জেলা হাসপাতালে প্রৌঢ়র মৃত্যু, দেহের দাবিদার নিয়ে মা ও স্ত্রীর টানাপোড়েন, হল না ময়নাতদন্ত
Be First to Comment