আসানসোল : আবারও পিছিয়ে গেল কয়লা পাচার মামলার চার্জ গঠন। আসানসোল সিবিআই আদালতে এই মামলার শুক্রবার চার্জ গঠন করার কথা ছিল।
কিন্তু তা হল না। কারণ, চার্জশিটে নাম থাকা ৫০ জনের মধ্যে এক অভিযুক্তর গরহাজির থাকা। আদালত সূত্রে জানা গেছে, তার নাম সামশের হোসেন। এদিন আদালতে তার আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেল শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তাই তিনি হাজির হতে পারেননি। এছাড়াও এদিন চার্জশিটে থাকা একটি বেসরকারি কোম্পানির তরফে তার লিকিউডেটার আবেদন করেছেন। তিনি আবেদনে বলেন, এই কোম্পানি লিকিউডেশনে চলে গেছে। এই ব্যাপারে আদালতকে কিছু জানানোর আছে।
তার এই আবেদন আদালত গ্রহণ করে। সবমিলিয়ে এদিন এই মামলার কোনও সওয়াল-জবাব বা শুনানি হয়নি। সবশেষে আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী নির্দেশ দেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেদিন সিবিআইকে এই মামলার চার্জ গঠন করার নির্দেশ বিচারক দিয়েছেন। একইসঙ্গে সেদিন সবাইকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ওই দিন বেসরকারি কোম্পানির লিকিউডেটারের আবেদনের শুনানি হবে বলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিন একইসঙ্গে চার্জশিটে নাম সবাইকে মামলার যাবতীয় নথি তাদের আইনজীবীদের দেওয়া হয়। এর আগের শুনানিগুলিতে অভিযুক্তদের তরফে তাদের আইনজীবীরা চার্জশিটের কপি পেতে আবেদন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এদিন তা দেওয়া হয়।
এদিন আদালতে অনুপ মাজি ওরফে লালা সহ মোট ৪৯ জন হাজির ছিলেন বলে সিবিআই আদালত সূত্রে জানা গেছে।
আসানসোল আদালতের দুই আইনজীবী শেখর কুন্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ এদিন বলেন, এদিন চার্জ গঠন করার কথা থাকলেও, তা হয়নি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ সেপ্টেম্বর হবে বলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ জুলাই এই মামলার চার্জ গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু দুই কয়লা কারবারি তারকেশ্বর মন্ডল ও মহঃ সাকিল গরহাজির থাকায় সেদিন তা সম্ভব হয়নি। এই দুজনের নাম সিবিআইয়ের পেশ করা দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারী চার্জশিটে আছে।
এই মামলায় মোট ৩৪৯ জন সাক্ষী আছেন। সবমিলিয়ে ২৫ হাজার পাতার মধ্যে চার্জ গঠন করতে হবে সিবিআইকে। এই মামলায় ডকুমেন্ট বা নথি রয়েছে মোট ১১৪৯ টি।
এর আগে, গত ৩ জুলাই আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে এই মামলার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারী বা অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারী চার্জশিটে নতুন করে আরো ৭ জনের নাম আছে। যার মধ্যে ৫ জন এমন রয়েছেন যাদেরকে সবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই পাঁচজন হলেন নরেশ কুমার সাহা ( জিএম), অশ্বিনী কুমার যাদব, অমিত কুমার ধর ( অবসরপ্রাপ্ত জিএম) , বাপি ওরফে সীমন্ত ঠাকুর ও বিদ্যাসাগর দাস। গত ৫ জুলাই এই পাঁচজন জামিন পেয়েছেন। এই চার্জশিটে ২ জনকে ফেরার বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই মামলার প্রথম চার্জশিটে ৪৩ জনের নাম রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিবিআই কয়লা পাচার কাণ্ডে এফআইআর করেছিল। প্রথমে সেই মামলায় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থা ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বা ইসিএলের ৪ জন ও পরে আরো একজন প্রাক্তন ও বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার বা পাঁচজন জিএম তিনজন ইসিএলের নিজস্ব নিরাপত্তা আধিকারিক গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। এই ৮ জন হলেন প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মল্লিক, সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়, তন্ময় দাস ও সুভাষচন্দ্র মৈত্র, সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তিনজন নিরাপত্তা আধিকারিক মুকেশ কুমার, দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় এবং রিঙ্কু বেহেরা।

সিবিআই যখন এই কয়লা পাচার মামলা শুরু করেছিল তখন প্রথম এফআইআরে অনুপ মাঝি ওরফে লালা ছাড়া ইসিএলের একাধিক জিএমের নাম ছিল। এর আগে কয়লা পাচার কাণ্ডে বিকাশ মিশ্র ছাড়াও চার কয়লা ব্যবসায়ী জয়দেব মন্ডল, গুরুপদ মাঝি, রত্নেশ ভার্মা সহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছিল। এছাড়াও ইসিএলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা ডিরেক্টর অপারেশন সুনীল কুমার ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর আনন্দ কুমার সিংকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে সিবিআই মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ইসিএলের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত রয়েছেন ১১ জন।




Be First to Comment