অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা: রানিগঞ্জে ইসিএলের কুনুস্তোরিয়া এরিয়ার অমৃতনগর কোলিয়ারিতে কয়লা খনিতে কর্মরত ৯ জন খনি আধিকারিক, কর্মী, ও নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধরের অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যেই কোলিয়ারির তরফে অভিযুক্ত তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ওই নেতা ও তার দলবলের বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, তৃণমূল পরিচালিত রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি তার কর্মস্থল ইসিএলের অমৃতনগর কোলিয়ারিতে আধিকারিকদের উপর হামলা চালিয়ে নিগ্রহ করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি তথা শ্রমিক সংগঠনের নেতা বিষ্ণুদেব নুনিয়ার বিরুদ্ধে কাজোড়ায় এরিয়ার কোলিয়ারির এক কর্মীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসে। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতে এবার ইসিএলের কুনুস্তোড়িয়া এরিয়ার অমৃতনগর কোলিয়ারিতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল । যা নিয়ে আরও একবার শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জানা গেছে, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ইসিএলের ভিজিলেন্স দপ্তর রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অমৃতনগর কোলিয়ারির কর্মী মহম্মদ সাবিরের বিরুদ্ধে চাকরিতে নিয়োগের সময় জমা দেওয়া তার জন্মগত শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। সেই সার্টিফিকেট সন্দেহজনক বলে মনে হওয়ার কারণে এপেক্স মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শারিরিক পরীক্ষা করে, তার জন্মের দিন নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, মহঃ সাবিরের বাবা আগে এই কোলিয়ারিতে কাজ করতেন । তার বাবার সার্ভিস রেকর্ডে সাবিরের জন্ম সাল ১৯৬৫ লেখা আছে । পরে তার বাবার মৃত্যুর পরে সাবির ২০০৩ সালে পোষ্য হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন। সেই সময় তিনি নিজেকে ঝাড়খণ্ডের একটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া হিসাবে নথি জমা দিয়েছিলেন বলে, ইসিএল সূত্রে জানা গেছে। সেই স্কুলের নথি অনুযায়ী (অ্যাডমিট কার্ড ) ১৯৭৫ সালে সাবিরের জন্ম হয়েছে । যদিও তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় রানিগঞ্জের একটি হাইস্কুল থেকে সাবির পড়াশোনা করেছে। আর সেই স্কুলের নথি অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৭৯ সালে । আর এইসব নথিকে গুরুত্ব দিয়ে ভিজিলেন্স দপ্তর থেকে তার শারিরিক পরীক্ষার পর সাবিরের জন্মের সাল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । সেই মত নির্দেশিকাও জারি হয়। এর বছরখানেক পরে সাবির কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ।
যদিও কলকাতা হাইকোর্ট প্রথমে ইসিএলের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করে। পরে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট সাবিরের শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম নির্ধারণের নির্দেশ বাতিলের আর্জি খারিজ করে। এরপর সাবির ডিভিশন বেঞ্চে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানায় । ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে বহাল রাখে। এই প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন , হাইকোর্টে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ইসিএলের পক্ষ থেকে সাবিরকে পাঁচবার শারীরিক পরীক্ষা না করানোর জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয় । যদিও তারপরেও তিনি সেই নোটিশ নিতে চাননি বলে অভিযোগ।
গত বুধবার ২৮ আগষ্ট সকালে সাবির কাজে যোগ দিতে গেলে তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয় না ।
আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে শখানেক অনুগামীকে নিয়ে সাবীর কার্যালয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ । জানা গেছে, ঐ হামলাকারী দলের মধ্যে ৫ জন খনি কর্মীও ছিল। এরপর অমৃতনগর কোলিয়ারির এজেন্ট উমেশ পণ্ডিত গত ২৯ আগস্ট গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে রানিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে তিনি পার্সোনাল ম্যানেজার , ম্যানেজার ও নিরাপত্তা আধিকারিক সহ মোট ৯ জন আধিকারিককে ধাক্কা মারা সহ নানাভাবে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে জানানো হয় সেই অভিযোগে এমনও দাবি করা হয় যে, তাদেরকে আগামী দিনে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে আধিকারিক ও অন্যান্য কর্মীরা আতঙ্কিত রয়েছেন বলে জানা গেছে । তারা এই ঘটনার তদন্ত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইসিএলের এক আধিকারিক বলেন, সাবির তাদের জানিয়েছেন কোনভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে না কেউ । আর তাকে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে আধিকারিকরা কাজ করতে পারবেন না বলেই হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার ।
যদিও এই বিষয়ে সাবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোন প্রতিক্রিয়া যায়নি। তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, আমার উচ্চ নেতৃত্ব এই নিয়ে যা কথার বলবেন। এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না।
এদিকে, নানা ঘটনায় নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন।
অন্যদিকে, রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, কোলিয়ারির ঘটনা নিয়ে একটি অভিযোগ ইসিএলের তরফে দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।




Be First to Comment