উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গেল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বৃষ্টি সুন্দরবনের কুলতলি ও মৈপীঠে। দীর্ঘ ১৫ বছরে বহুবার ঘূর্ণিঝড়ের দাপট দেখেছেন এই কুলতলি মৈপীঠের মানুষ। চোখের পলকে ভেসে গিয়েছে তাদের বাড়ি। আবার কখনও জলে ডুবে গেছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। মাথা গোঁজার এক চিলতে জায়গা তৈরি করতে কালঘাম ছুটেছে তাদের। আর এই ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে রয়েছেন সুন্দরবনের মানুষজন।
আজ, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়বে সুন্দরবনে। বুধবার রাতেই তার শক্তি বাডিয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার চোখে জল নিয়ে কুলতলির দেউলবাড়ির বাসিন্দা নিরাপদ নস্কর বলেন, প্রতিনিয়ত ঘূর্ণিঝড়ে মাতলার জলের তোড়ে নদীবাঁধ ভেঙেছে। তলিয়ে গিয়েছে ঘর-বাড়ি। আবার একটা ঘূর্ণিঝড় দানার দাপট শুরু হয়েছে। এ বার কী হবে? কী ভাবে বাঁচব আমরা?কিছু বুঝতে পারছি না।খুব চিন্তায় পড়ে গেছি আমরা।
আয়লার পর থেকেই এই এলাকার মানুষের কংক্রিটের বাঁধের দাবি। কিন্তু তা আজও হয়নি। ২০০৯-এর ২৫ মে আয়লা এসেছিল।আমফান গেছে ২০২০ সালের ২০ মে।এর পরে এক এক করে বুলবুল, ফণি,ইয়াসের প্রকোপ দেখেছেন সুন্দরবনের মানুষ। কিন্তু তার পরেও আয়লায় বিধ্বস্ত বাঁধ সারাইয়ের প্রথম দফার কাজই ১৫ বছরে ও শেষ হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জমি জটিলতার কারণে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় টাকার ও সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা হয়নি।
এই সুন্দরবনের মোট নদীবাঁধ ৩৫০০ কিলোমিটার। আয়লার দাপটে প্রায় ৭৭৮ কিলোমিটার নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল।সেই বাঁধের কোন ও চিহ্নই ছিল না। তৎকালীন বাম আমলে সুন্দরবনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাঁর জন্য ৫০৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে সরকারের পালা বদলের পরে জমি জটের কারণে সেই কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। অল্প কিছু জায়গায় নামমাত্র কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর অধিকাংশ জায়গায় বাঁধ গুলি আজও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ।
কুলতলির স্থানীয় মানুষজন বলেন, আয়লার পর যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তাতেই এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে মিশেছে বাঁধ। বাঁধ ভেঙে নদীতে চলে গেছে মাটির বাড়ি। চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। নোনা জলে নষ্ট হয়েছে চাষ করা মাছও।এই সুন্দরবনের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার দাবিও জানিয়েছে কম বেশি সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। যার জন্য ভুগতে হচ্ছে গোটা সুন্দরবন বাসীকে। কার্যত ভিটে হারিয়ে সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষ আজ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেই অবস্থার মধ্যে আবারও বিপদের হাতছানি নিয়ে এসেছে এবার ঘূর্ণিঝড় দানা। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই আতঙ্কে দিন কাটাছে তাই সুন্দরবনবাসী।
কুলতলির মৈপীঠ নগেনাবাদের সুকুমার মন্ডল নামে এক সুন্দরবনবাসী বলেন,প্রত্যেক বার ঝড়ে ঘর ভাঙে না হলে ঘরের মধ্যে জল ঢুকে যায়। ওই অবস্থায় আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।বৃহস্পতিবার সকালে কুলতলির কৈখালি ও মৈপীঠ এলাকার নদী বাঁধের অবস্থা পরিদর্শন করেন কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল ও কুলতলি থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ।
এদিন কুলতলির বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “কুলতলির কৈখালি মৈপীঠ সহ ৪-৫ টি জায়গায় নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ।সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে মেরামত করার কাজ চলছে। তবে ত্রাণ শিবিরগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে।তবে এখনো পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে কাউকে আনা হয়নি।সময় অনুযায়ী তা করা হবে।তবে মজুত রাখা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। সবদিক থেকে আমরা প্রস্তুত।”
এ দিকে এ দিন কুলতলি বিডিও অফিসে কন্টোল রুম খুলে সব কিছুর ওপর নজরদারি চালাচ্ছেন কুলতলির বিডিও সুচন্দন বৈদ্য।
Be First to Comment