উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়: জয়নগরের বহডুর ময়দা গ্রামেপাতাল ভেদী দক্ষিণাকালীর মন্দির বহু প্রাচীন। এই মন্দিরে কোনও দেবী মূর্তি নেই। নদীগর্ভ থেকে পাওয়া একটি শিলাকে চতুষ্কোণ গহ্বরে দেবীর প্রতীক হিসেবে রেখে পুজো করা হয়। শিলাটি পাতালভেদী এবং তার সর্বাঙ্গে সিঁদুরমাখা। এই শিলাকেই দক্ষিণা কালী রূপে পুজো করা হয়।
শিলারূপী কালী আবার স্বয়ম্ভূ নামেও পরিচিত। কথিত আছে, ১৫০০ শতকের শেষের দিকে পর্তুগিজদের একটি অংশ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার “ময়দা” নামক এই গ্রামে চলে আসে এবং গঙ্গার তীরকে বেষ্টন করে তারা মূলত বাণিজ্য স্থাপনে মনোনিবেশ করে।
ময়দা গ্রাম সে যুগে বাণিজ্য স্থাপন করার ক্ষেত্রে ছিল খুবই উপযুক্ত, সেই সব চিন্তাভাবনা থেকেই পর্তুগিজরা এই অঞ্চলের নামকরণ করেন “মাদিয়া” নাম অনুসারেই গ্রামের নাম রাখা হয় ময়দা।
অনেকে বলেন, পাতালভেদী কালী পুজোর দায়িত্বে ছিল পাঠক বংশ। এই বংশের অন্যতম হলেন সাধক ভবানী পাঠক। তিনি নিজে পাতালভেদী কালীর পুজো করতেন। এই মন্দিরের পিছনে বকুলগাছের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে সাধনা করতেন তিনি। প্রথা মেনে কালীপুজোর রাতে জমিদার সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের নামে সংকল্প করে জোড়া পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অন্য মানতকারীদের পাঁঠাও বলি হয়।
এখন মন্দিরে চলছে সাজ সাজ রব। রংয়ের পোচ পড়েছে মন্দিরের সর্বত্র। মন্দির কমিটির সদস্য বলেন, মায়ের শিলাও এবার রং করা হচ্ছে। মা দক্ষিণাকালীর পুজো হওয়ায় কারণে ময়দা সহ আশপাশের গ্রামে কোথাও কালীপুজো হয় না। কোনও বাড়িতেও হয় না।
জানা যায়, বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বংশধর গঙ্গাধর চৌধুরী ১১৭৬ বঙ্গাব্দে ময়দায় এই কালীমন্দির নির্মাণ করেন। মা দক্ষিণাকালী সম্পর্কে নানা জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। নৌকো করে গঙ্গা দিয়ে যাওয়ার সময় গঙ্গাধরের চোখে পড়েছিল, বকুলগাছের ডালে বসে থাকা এক বালিকাকে। সেই শিশু কন্যাটি সেই রাতেই জমিদারের স্বপ্নে দেখা দেয়।আর এই মন্দিরে আসতে গেলে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার নামখানা লোকালে বহড়ু স্টেশনে নেমে ভ্যান যোগে ময়দা কালীবাড়িতে আসতে হবে আপনাকে।
Be First to Comment