Press "Enter" to skip to content

তৃতীয় রানিগঞ্জ বইমেলার উদ্বোধনে বিতর্কিত মন্তব্য গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর, ‘ক্যাপসুল খাইয়ে হিন্দু ধর্মে হাইব্রিড করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য খারাপ হবে’

রানিগঞ্জ : “রানিগঞ্জ বইমেলা”র উদ্বোধন করতে এসে রবিবার বিকেলে হিন্দু ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার পরিসেবা দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন ক্যাপসুল খাইয়ে খাইয়ে হিন্দু ধর্মকে হাইব্রিড করা হচ্ছে। এতে শরীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে।

তাঁর দাবি, তারা এই মুহুর্তে নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁর মতে, এখন সনাতনী হিন্দু ধর্মকে নানাভাবে পরিচালিত করা হচ্ছে। যা, হিন্দু ধর্মের পক্ষে মঙ্গলদায়ক নয়। রবি ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) বা অন্য মনীষীরা সনাতনী হিন্দু ধর্ম নিয়ে সংঞ্জা দিয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হওয়া উচিত।

“বইয়ের জন্য হাঁটুন” এই আহ্বান জানিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে তৃতীয় রানিগঞ্জ বইমেলা শুরু হল শনিবার রানিগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ ময়দানে। এবারের এই মেলার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন করেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এছাড়াও ছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলম, আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী সৌমাত্বানন্দজী মহারাজ ও রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় সহ অন্যরা।

বেশ কিছু বইয়ের উন্মোচন করেন মেলার উদ্বোধক রাজ্যের জনশিক্ষা প্রচার ও গ্রন্থাগার পরিষেবা দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, স্রোতের বিরুদ্ধে বইছে সনাতনী হিন্দু ধর্ম। যা রক্ষা করার দায়িত্ব মহারাজদের। তাঁর আরো দাবি, ইসলাম ধর্মে হিংসা নেই। স্বামীজি প্রকৃত সনাতন হিন্দু।

তিনি দাবি করে বলেন, “প্রায় ২৯ কোটি বাংলা ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে পৃথিবীতে। অথচ বাংলা ভাষার উপর আজও আক্রমণ ধেয়ে আসছে। তাই নিজেকে দুর্বল ভাববেন না। বাঙালিরা মাথা উঁচু করে চলুন। আর এর সাথেই তিনি বলেন, কিছু কিছু নেতা মিথ্যে বলেন। আর মিডিয়া খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শুধু সেই সব দেখায়। টাকা দিয়ে মন জয় করা যায় না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মডেল কেউ দেখাতে চায় না। প্রচার নেই। প্রচার হলেই হেরে যেতে হবে সকলকে। এই বলেই তিনি কোন নাম না করে দাবি করেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে ইংরেজদের চাটুকার ছিল অনেকেই। যাঁরা আজ আমাদের গালিগালাজ করছেন। আর এখন ৬৫ ইঞ্চি ছাতি তারা তাদের দালালি করছে”।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থান কাল পাত্র আমি ঠিক বুঝি। যিনি এসব নিয়ে তিক্ততা করছেন তারা কত বড় মানুষ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গেই তিনি দাবি করেন, সনাতন ধর্মকে এখন বিভিন্ন রূপরেখায় পরিচালিত করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলেও মোদীজি যান না কেন? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন ওরা বসে আলোচনা করছেন না? এখন যা সব হচ্ছে, তা আমাদের ব্যর্থতা নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থতা বলেই দাবি করেন তিনি। সে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে তার দাবি, আমরা পশ্চিমবঙ্গে অনেক ভালো আছি, অন্য রাজ্যের তুলনায় তো বটেই।

তিনি বলেন, “আমি যদি এই প্রসঙ্গে কিছু বলছি তা স্থান কাল পাত্র ভেবে বলছি। কোন মিডিয়াকে এখনো বলিনি। এই প্রথম বলছি”।

উল্লেখ্য এ বারের তৃতীয় বছরের রানিগঞ্জ বইমেলায় ৪৮ টি বইয়ের স্টল করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বেশ কিছু স্টল খালি রয়েছে। তবে খুব দ্রুত সে সকল স্টল গুলি পূরণ হয়ে যাবে বলেই জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

এই মেলার উদ্বোধনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় রানিগঞ্জের প্রায় ১১ টি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। রানিগঞ্জের তার বাংলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে সেই শোভাযাত্রা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সিয়ারসোল রাজ ময়দানে এসে শেষ হয়। মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেড়েছে বিশেষ একটি স্টল।

জানা গেছে, এই স্টলের মাধ্যমে প্রতিদিন বিভিন্ন স্বাস্থ্যপরিসেবা প্রদান করা হবে মেলায় আগত দর্শকদের। বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সুস্বাস্থ্য কিভাবে বজায় থাকবে তাও জানানো হবে এই পরিষেবার মাধ্যমে। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের পক্ষ থেকে মেলায় আসা বইপ্রেমী মানুষদেরকে বিনামূল্যে গাছের চারা দেওয়া হয় । আর খাদ্য রসিকদের রসনা তৃপ্তির জন্য রয়েছে বেশ কিছু খাবারের স্টলও।

এই বইমেলা প্রতিদিন দুপুর দুটো থেকে রাত নটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই রানিগঞ্জ বইমেলা চলবে। বাইরের শিল্পীদের পাশাপাশি স্থানীয় বহু শিল্পীদের নিয়ে থাকছে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *