Press "Enter" to skip to content

সরকারি দফতরের একাংশের মদতে পুকুর হয়ে যাচ্ছে বাস্তু! স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়ছে দুর্গাপুরে

জমির চরিত্র বদল করে চলছে জমি মাফিয়া রাজ। প্রতীকী ছবি

অমল মাজি: একসময় দুর্গাপুর শহরে এবং বিভিন্ন গ্রামে জলাশয়ের অভাব ছিল না। শীতে সেখানে পরিযায়ী পাখির ভিড় জমতো। বিগত কয়েক বছরে সেইসব জলাশয়গুলি লোপাট হয়েছে। মাটি ও আবর্জনা ফেলে ভরাট করে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বারবার। দুর্গাপুর পুরসভার অন্তর্গত নারায়ণপুর, নডিহা মৌজা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতায় পুকুর ও জলাশয় ভরাটের একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। জলাশয় ও পুকুর বুজিয়ে দুর্গাপুরে এইসব এলাকায় দেদার গড়ে উঠেছে আবাসন। জমির চরিত্র বদল করে চলছে জমি মাফিয়া রাজ।

অভিযোগ, নারায়ণপুর মৌজার ভৈরবপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের সংলগ্ন একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে । ওই পুকুরটির জায়গার পরিমান ৪৫ শতক। ওই পুকুরটির একসময় মালিক ছিল নডিহা গ্রামের মুখার্জি’রা। ১৯৭৪ সালে ওই পুকুরের ৩৫ শতক বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে সুরেশ কুমার চট্টপাধ্যায় এবং বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই পুকুরটি কেনেন সনৎ বায়েন, জয়গোপাল মুখার্জি, চিত্তরঞ্জন মুখার্জি এবং সুকান্ত পাল, এই চারজন। আর এস পড়চায় রেকর্ডভুক্ত ওই পুকুরটির দাগ নম্বর ৭৮৭ (RS 787)। এরপর ওই পুকুরটি এল আর রেকর্ডভুক্ত করা হয়। এল আর রেকর্ডভুক্ত হওয়ার পর তার দাগ নম্বর হয় ৯০৯ (LR 909) এবং আশ্চর্যজনকভাবে পুকুর-এর চরিত্র বদল করে হয়ে যায় বাস্তু। অর্থ্যাৎ ছিল বিড়াল হয়ে গেলো রুমাল।

ঘটনায় প্রকাশ,পুকুরটি বাস্তুতে পরিণত করার পর সেই জমি বিক্রি করা হয় ৮ জন ব্যক্তিকে। ১) জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ( ৪۔৬৬৯৫ শতক ), ২) কৃষ্ণ চন্দ্র দাস, সুচিত্রা দাস ( ৪۔২২৪০ শতক) , ৩) ঝুনু ভট্টাচার্য (৪۔ ৭১৯০ শতক ), ৪) অতসী ঘোষ ( ৪۔ ৯৫০০ শতক ), ৫) সংগীতা পান্ডে (৪۔ ০৯২০ শতক ), ৬) তরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৩۔৭৪৫৫ শতক ), ৭) সোমনাথ ঘোষ ( ৪۔ ০৯২০ শতক ), ৮) শম্পা ঘোষ ( ৩۔১০২ শতক)। এখন এই ৮ জন ব্যক্তি ওই জমিতে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, পুকুর কী ভাবে বাস্তু হল?

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভূমি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে আঁতাঁত রয়েছে প্রভাবশালীদের। তার ফলে রাতারাতি পুকুরের চরিত্র বদল করে হয়ে গেছে বাস্তু । শুধু তাই নয়, আর এইসব পুকুর ও জলাশয় হারিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। অথচ আইন অনুযায়ী পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা যায় না। কিন্তু তার পরেও বছরের পর বছর ধরে কোন মন্ত্রবলে ভরাট হচ্ছে পুকুর? প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গত কয়েক বছরে পুকুর ভরাটের সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। পরিবেশপ্রেমীরা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।

স্থানীয়রা বলেন, একসময় দুর্গাপুর জুড়ে প্রচুর জলাশয় ছিল। নগরায়নের ফলে সেইসব হারিয়ে গেছে । প্রশাসন ও পুরসভাকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। জলাশয় হারিয়ে যাওয়ায় দুর্গাপুরের মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, যাঁরা পুকুর ভরাট করছেন তাঁরা প্রত্যেকে প্রোমোটার, ঠিকাদার, কেউ আবার এলাকার নেতা, তাই সবকিছু জেনেও মুখ বুজে থাকতে হয়।

ডিএমসির প্রাক্তন মেয়র, বর্তমানে প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, পুকুর কোনোভাবে বাস্তু করা যায় না। তবে এটা দেখার দায়িত্ব ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। তাদের উচিত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া । দুর্গাপুর সিটিসেন্টারে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিএলআরও মৈনাক চট্টোপাধ্যায় বলেন, সাধারণত পুকুরের চরিত্র বদল করে বাস্তু করা যায় না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সূত্রে খবর, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পাওয়া গেছে । কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *