উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি : জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে অনেকটা সাফল্য পেল কবচ প্রকল্প। আর তাই এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে সুন্দরবনে।
সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকা গুলিতে প্রতিবছরই জলে ডুবে শিশু মৃত্যু বেড়ে চলেছে। আর তাই বেশ কয়েক বছর আগে সুন্দরবন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করে সিনি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।এক বছরের জন্যপরীক্ষামূলক ভাবেই শুরু করা হয়েছিল সেই কর্মসূচি। সম্প্রতি এক বছর পূর্ণ করেছে ‘কবচ’।
সিনির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক সুজয় রায় বলেন, সারা বিশ্বের নিরিখে জলে ডুবে শিশু মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ছিলো সুন্দরবনে।আমরা কবচ প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ শুরু করি গত বছরে।ভালোই সাড়া পাই আমরা।আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে প্রকল্পের স্বীকৃতি পেয়েছি। আর তার জেরেই জলে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধের লক্ষ্যে আরও এক বছর ‘কবচ’ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।শুরুতে প্রাথমিক ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়ে ছিল।বাড়ির আশেপাশে পুকুর থাকলে, তা ঘিরে দিতে বলা হয়েছিল।শিশু দের সব সময়ে চোখে চোখে রাখা, একটু বড় হলে সাঁতার শোখানোর পরামর্শ ও দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের প্রথমে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মৈপিঠ উপকূল থানার মৈপীঠ ও ভুবনেশ্বরীর দু’টি গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয় এই ‘কবচ’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে শিশুদের দিনের একটা সময়ে এক ছাদের নীচে এনে পড়াশোনা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। যে সকল শিশুদের বাবা-মা বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকেন বা বাড়িতে দেখা শোনার লোক কম এবং বাড়ির পাশেই বা কাছাকাছি পুকুর রয়েছে, তাদের ‘কবচ’ কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। গ্রামেরই কিছু মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ওই শিশুদের দেখাশোনা করা হয়। পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। দু’টি গ্রামের দু’টি কবচকেন্দ্রে ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি প্রায় ৪০ জন শিশুকে এ ভাবেই দেখাশোনা করা হচ্ছে গত এক বছরের ও বেশি সময় ধরে।
তিনি এও বলেন,জলে ডোবা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সব নির্দেশ পালনের কথা বলেছে, সেই সব নির্দেশ মেনেই এই কবচ কেন্দ্র দুটি তৈরি করা হয়েছে। গত এক বছরে এই দুটি অঞ্চলে কার্যত কোনও জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।আর তাই এই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়াতে চলছে আই সিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ)। আরও এক বছর এই প্রকল্প চলবে।
সিনির উদ্যোগেই ‘কবচ’ কেন্দ্রগুলির কাছে অবস্থিত পুকুরে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে সুইমিং পুল।জলে ডোবা প্রতিরোধে শিশুকে দ্রুত সাঁতার শেখানোর জন্য এই পুকুরে সুইমিং পুল তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশু ‘কবচ’ কেন্দ্রে থাকতে পারবে। তারপর সাঁতার শিখিয়ে তাদেরকে ছাড়া হবে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে শিশু মৃত্যু কিছুটা হলেও কমেছে।ইতিমধ্যে সুন্দরবনের কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ ব্লকের মানুষ নিজেরাই এগিয়ে এসে তাদের বাড়ির পাশের পুকুরের সামনে বেড়া দিয়ে শিশু মৃত্যু কমানোর চেষ্টা করছে।
Be First to Comment