Press "Enter" to skip to content

জয়নগরের তৃণমূল বিধায়ক ও তাঁর নিকট আত্মীয়দের বুথে গো হারা হারলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী, উঠল প্রশ্ন

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন তৃণমূল প্রার্থী। তৃতীয় বার সংসদে গেলেন প্রতিমা মণ্ডল।তবে জয়ের কাঁটা জয়নগরের তৃণমূলের বিধায়কের।নিজের বুথ সহ অধিকাংশই বুথে ভরাডুবি তৃণমূলের জয়নগর বিধানসভায়।

একসময়ে এসইউসিআই-এর দুর্জয় ঘাটি এখন তৃণমূলের দুর্জয় ঘাঁটি জয়নগর তপশিলী লোকসভা কেন্দ্র।পরপর তিনবার এই লোকসভা আসন থেকেই জয় লাভ করেছেন প্রাক্তন রাজ্য সরকারের আমলা তথা দাপুটে তৃণমূলের নেতা ও প্রয়াত মন্ত্রী,সাংসদ গোবিন্দ চন্দ্র নস্করের কন্যা প্রতিমা মণ্ডল।দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই লোকসভা আসনটি এবারেও ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২১৯ টি ভোটে জয়লাভ করে রীতিমতো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে দলের অন্দরে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রতিমা মণ্ডল।

জয়নগর,কুলতলি,ক্যানিং পূর্ব,ক্যানিং পশ্চিম,বাসন্তী গোসাবা ও মগরাহাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত এই লোকসভার আসন।এই লোকসভা কেন্দ্রটি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চ ল নিয়ে গঠিত। তবে এই বিপুল জয়ের মধ্যে কাঁটা একটাই সেটা হল খোদ জয়নগর তপশিলি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের নিজের বুথ অর্থাৎ নিজের জন্মস্থান জয়নগর বিধানসভার জয়নগর ২ নং ব্লকের মায়াহাওড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দাড়া গ্রাম। সেখান কার ১৬৬ নম্বর বুথের তিনি ভোটার।আর সেই বুথেই ৮০ ভোটে বিজেপির ডা: অশোক কান্ডারীর থেকে পিছিয়ে গেছে তৃণমূলের প্রার্থী প্রতিমা মন্ডল।শুধু ওই মায়াহাউড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৭ টি বুথের মধ্যেই ১৩ টি বুথেই পিছিয়ে তৃণমূল।শুধু বিধায়ক তাঁর জন্মস্থান নয় বর্তমান তিনি একই বিধানসভা এলাকার জয়নগর ১ নং ব্লকের দক্ষিণ বারাশত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা।যে পাড়ায় তিনি থাকেন সেখানকার বুথ নম্বর হলো ১৬। আর সেই বুথেই ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের।এখানেও বিজেপির থেকে ১৮৬টি ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল।বিধায়কের শ্যালক তুহিন বিশ্বাস আবার জয়নগর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি।তাঁর স্ত্রী ঋতুপর্ণা বিশ্বাস ও জয়নগর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তাঁরা বিধায়কের বাড়ির পাশের ২২ নম্বর বুথের ভোটার।সেই বুথেই ১০৯ টি ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী পিছিয়ে গেছে বিজেপির থেকে।

একইভাবে দক্ষিণ বারাশত গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান জয়ন্তী হালদার তিনিও ওই একই বুথের ভোটার।বিধায়কের অপর এক শ্যালক তাপস বিশ্বাস দক্ষিণ বারাশত গ্রাম পঞ্চায়েতের অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান ও দ: বারাশত শিবদাস আচার্য হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি পদেও রয়েছেন।একই পরিবারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকলেও কোন ভাবেই ভরাডুবি রুখতে পারেননি তাঁরা।

দক্ষিণ বারাশত অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সজল দাসের ১৪ নম্বর বুথেও ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের।গোটা দক্ষিণ বারাশত গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৪ টি বুথের মধ্যেই তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে ১৫ টি আসনে।সংখ্যালঘু বুথ গুলিই একমাত্র জয় পেয়েছে তৃণমূল। তৃনমূল এই পঞ্চায়েতে বিজেপির থেকে এগিয়ে ছিলো ১,২,৩,৪,৫, ৬,৮,৯,১০ নং বুথ গুলিতে,মোট ৯ টি বুথে তৃনমূল এগিয়ে ছিল।আর বিজেপি এগিয়ে ছিল ৭,১১,১২, ১৩,১৪,১৫,১৬, ১৭,১৮, ১৯,২০,২১,২২,২৩ ও ২৪ নং বুথে।বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের একটিও বুথে জয়লাভ করতে পারেনি বিজেপির কোন প্রার্থী।এবারে এই পঞ্চায়েতে বিজেপির ডা: অশোক কান্ডারীর প্রাপ্ত ভোট ৭৯১০ টি ভোট এবং তৃণমূলের প্রতিমা মণ্ডলের প্রাপ্ত ভোট ১০,০১৭ টি ভোট।

তৃণমূল এই পঞ্চায়েত থেকে মাত্র ২ হাজার ১০৭ টি ভোটে লিড পায়।আবার জয়নগর ১ নম্বর পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি জয়নগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের নিকট আত্মীয় প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল।প্রিয়াঙ্কা আবার জয়নগর ২ নং ব্লকের বেলে- দুর্গানগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৮২ নম্বর বুথের ভোটার।আর তার বুথেই ২২৫ টি ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল।লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিধায়কের নিজের বুথে দলের এই ভরাডুবিতে উঠে গিয়েছে প্রশ্ন।যা একেবারে অস্বস্তির জায়গায় ফেলে দিয়েছে বিধায়ককে।

বিপুল জয়লাভের পরেও বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূলের সাংসদ থেকে জেলা নেতৃত্বকে।যদিও এ বিষয়ে বিধায়কের কোন প্রতিক্রিয়া না মিললেও জয়নগর কেন্দ্রের তৃণমূলের বিজয়ী সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন,’আমার প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় প্রচারের দ্বায়িত্বে ছিলেন নিজ নিজ বিধানসভা এলাকার বিধায়করা।আমি বিধায়কদের তৈরী কর্মসূচি অনুযায়ী প্রচারও করেছি।মানুষ আমাকে আশীর্বাদ করেছেন বলেই ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ২১৯ টি ভোটে জয়ী হয়েছি।তবে জয়নগরের বিধায়কের নিজের বুথ কিংবা নিজের আত্মীয়দের বুথে আমরা কেন পরাজিত হয়েছি সেটা একমাত্র বিধায়কই তাঁর সদুত্তর দিতে পারবেন।’

তবে তৃণমূল বিধায়কের বুথে ভরাডুবি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার দলীয় মুখপাত্র সঞ্জয় নায়েক বলেন, ‘জয়নগরের বিধায়কের বুথে ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে।যে কারণে বিজেপি ওখানে তৃণমূলকে পিছিয়ে দিয়েছে।বাকি জায়গায় মানুষকে ভয় ও সন্ত্রাস করেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে গণতন্ত্রকে হত্যা করে।আর সামনে ২০২৬ সালে বিধানসভার নির্বাচন। আর এই ফলাফলে রীতিমতো অস্বস্তিতে জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস।জয়নগর ১ নং ব্লকের উওর দূর্গাপুর পঞ্চায়েত ও জয়নগর ২ নং ব্লকের গড়দেওয়ানি পঞ্চায়েত থেকে সবচেয়ে বেশি লিড পেয়েছে তৃণমূল। আর জয়নগর বিধানসভার একমাত্র মায়াহাউড়ি পঞ্চায়েতে পরাজয় হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর।আর ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে তাই শুরু হয়ে গেছে চুলচেলা বিশ্লেষণে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *