Press "Enter" to skip to content

অতীতের ঐতিহ্য হারিয়ে এখনও চলছে জয়নগরের প্রাচীন রাসযাত্রা, জড়িয়ে রয়েছে ডাক্তার নীলরতন সরকারের ইতিহাস

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: সরকারি সাহায্য ছাড়া কোনোরকমে চলছে জয়নগরের প্রাচীন দুটি রাসযাত্রা। নদিয়া শান্তিপুরের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ম্ভরে পালন করা হয় রাস উৎসব। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় রাস উৎসবের সুখ্যাতি রয়েছে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তেমনি জয়নগর উত্তরপাড়া সরকার বাড়ির রাস উৎসবের সুখ্যাতি অর্জন করেছে এক পৃথক কারণে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর এলাকার সরকার বাড়ির রাস উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ডাক্তার নীলরতন সরকারের নাম। আজ থেকে প্রায় আনুমানিক ২০০ বছর আগে জয়নগর উত্তরপাড়ার সরকার বাড়িতে জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হতো দুর্গা পুজো। দুর্গোৎসবের পাশাপাশি জয়নগর এলাকার সরকার বাড়ির পরিবারের সদস্যরা উৎসবের আমেজকে ধরে রাখতে পালন করতেন রাস উৎসব। জয়নগর উত্তরপাড়া এই সরকার বাড়ির রাস উৎসব অতীতের জৌলুস হারিয়েছে কিন্তু প্রাচীন প্রথা মেনে এখনো পালন করা হয় জয়নগর সরকার বাড়িতে রাস উৎসব।শুক্রবার রাস পূর্ণিমার পুন্য লগ্নে রাস উৎসবের মাতবে গোটা বাংলার পাশাপাশি জয়নগরের সরকার বাড়িতেও সাড়ম্বরে পালন করা হবে রাস উৎসব।

কথিত রয়েছে, আজ থেকে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছর আগে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগর উওরপাড়ার স্বর্গীয় গোপাল চন্দ্র সরকারের হাত ধরে জয়নগরের সরকার বাড়িতে রাস উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়। প্রাচীন প্রথা মেনেই প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে সেই রাস উৎসব। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের নেতড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ডঃ নীলরতন সরকার। তৎকালীন সময়ে পড়াশোনা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু জয়নগরের উত্তরপাড়ার মামার বাড়িতে থেকেই চালিয়ে যেতেন ডা. নীলরতন সরকার।এই মামার বাড়ি থেকেই সে বহড়ু হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। কর্মজীবনে বেশিরভাগ অংশই জয়নগর কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছিল ডা. নীলরতন সরকারের।

প্রতি বছর রাস উৎসবে জয়নগরের এই সরকার বাড়িতে ছুটে আসতেন ডা. সরকার। তৎকালীন সময়ে জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হতো সরকার বাড়িতে এই রাস উৎসব। এ বিষয়ে সরকার বাড়ির বর্তমান সদস্য শৈলেন্দ্রনাথ সরকার জানান,এই রাস পুজো হয় গোপাল জিউর,রাধা ও বিষ্ণুর মূর্তিকে সামনে রেখে।তবে আগের মতন জৌলুস আর নেই এই সরকার বাড়ির রাস উৎসবে। আগে এলাকার বহু মানুষ এই রাস উৎসব চালানোর জন্য এগিয়ে আসতো কিন্তু এখন আর এলাকার মানুষ এই রাস উৎসব নিয়ে আগ্রহ দেখায় না।আগে এক সপ্তাহ ধরে মেলা বসতো।পুতুল নাচ,যাত্রা,বাউল,কীর্তনের অনুষ্ঠানে আশে পাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ উপস্থিত হতো।পূর্ণদাস বাউলের মতন শিল্পী এখানে এসে অনুষ্ঠান করে গেছেন।এখানকার রাসে একশোর ওপর মাটির সঙ তৈরি করা হয়।এখন চারদিন ধরে চলে এই উৎসব।

আগে জয়নগর মিত্রগঞ্জ বাজারের সবজি,মাছের বাজার বসতো এখানে এক সপ্তাহ ধরে। এখন তা বসে না। অতীতের সেই জৌলুস হারিয়ে গিয়েছে। এখন যথ সামান্য সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়ে এই রাস উৎসবকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান বংশধরেরা।তাঁরা চায় এলাকার মানুষ এগিয়ে আসুক এই উৎসবে আরো বেশি করে। আনন্দের সঙ্গে কেটে যায় রাস উৎসবের কয়েকটা দিন। অতীতের সেই ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে উওরপাড়ার সরকার বাড়ির সদস্যরা।আর এই সরকার বাড়ির পাশে ঘোষ বাড়ির রাস ও আগে জমজমাট হতো। এখন শুধু ইতিহাস টেনে নিয়ে চলেছেন এই বাড়ির বংশধরেরা। ১২০০ বঙ্গাব্দে কৃপারাম ঘোষের পুত্র রামজয় ঘোষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে নন্দ নন্দন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। আজও সেই মূর্তিতে রাসযাত্রা হয়ে আসছে এখানে।

এবারে এখানে যাত্রা,পুতুলনাচ ও কীর্তনের অনুষ্ঠান হবে বলে জানা গেল।তাই শিয়ালদহ দক্ষিন শাখার জয়নগর মজিলপুর স্টেশনে নেমে জয়নগর উত্তরপাড়া চলে আসতে পারেন অটো, টোটো বা ভ্যান যোগে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *