প্রবোধ দাস, পুরুলিয়া: তাঁত শিল্পকে পুনরায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পুরুলিয়া জেলায় শুরু হল নীল চাষ। তাঁতের কাপড়ের সুতোর রঙের জন্য আগে যে প্রাকৃতিক সম্পদ পলাশ, সিমূলের পাতা ব্যবহার করা হতো এবার সেই রঙের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে অর্গানিক পদ্ধতিতে এই নীল চাষ শুরু হল পুরুলিয়া জেলার কেন্দার প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকা টুক্যা গ্রামে।
একটা সময় ব্রিটিশ নীলকর সাহেবরা অতিরিক্ত লাভের আশায় বাংলার চাষিদের দিয়ে জোর করে এই নীল চাষ করাতেন। নীলকরদের অত্যাচার আর নিপীড়নের কারণে বাংলায় নীল বিদ্রোহ হয়েছিল। তারপর বাংলা থেকে নীল চাষ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ইতিহাস বোধ হয় এভাবেই ফিরে আসে।
শতাধিক বছর পরে জঙ্গলমহলের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় ফের শুরু হল সেই নীল চাষ।কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুলিয়ার মাটি নীল চাষের জন্য অত্যন্ত ভালো। তাই যথেষ্ট ভালো মানের নীল উৎপাদিত হচ্ছে পুরুলিয়ায়। সেই নীল রং তাঁতের কাপড়ে ব্যবহার করছেন তারা। বাড়ছে তাঁতের কাপড়ের চাহিদাও। আর এতে লাভের মুখ দেখছেন নীল চাষি থেকে তাঁতশিল্পীরা।

পুরুলিয়ার আদিবাসী-অধ্যুষিত এলাকা টুক্যা গ্রামে বিলুপ্তপ্রায় নীল চাষ শুরু করেছেন আদিবাসীরা। কোনরকম রাসায়নিক ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এই নীল চাষ করছেন তারা। সেই নীল রং তাঁরা ব্যবহার করছেন নিজেদের তৈরি তাঁতের কাপড়ে।
জৈব পদ্ধতিতে প্রস্তুত এই প্রাকৃতিক নীল রঙ তাঁতের কাপড়ে ব্যবহার করায় বাজারে সেই কাপড়ের চাহিদাও বাড়ছে বিপুল। এতে রোজগারের নতুন দিশা দেখছেন স্থানীয় মানুষ। অনেকেই ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ ছেড়ে নিজেদের চাষের জমিতে শুরু করেছেন নীল চাষ। অন্যান্য চাষের ক্ষেত্রে একবার চাষ করলে ফসল একবারই হয়, কিন্তু এই নীল চাষের ক্ষেত্রে একবার চাষ করে তিন বার নীল উৎপাদন হয়। এর ফলে, অনেকেই ধান, গম বা অন্যান্য চাষ ছেড়ে নীল চাষের উপর জোর দিচ্ছেন।




Be First to Comment