Press "Enter" to skip to content

আসানসোল কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে যোগ রাজ্যপালের, শুনলেন ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি, দেখলেন ‘কালো পতাকা’, বিক্ষোভে সামিল শাসক দলের ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠন

অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা,  আসানসোল: কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন বা সমাবর্তন অনুষ্ঠান। বুধবার দুপুরে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোসকে দেখতে হল “কালো পতাকা”। আর তার সঙ্গে শুনতে হল “গো ব্যাক” ধ্বনি।

৬ বছর পর এ দিন কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। ‌সেই অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে যোগ দিতে রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ড. সিভি আনন্দ বোস নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুটা সময় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছান। এদিন তিনি সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কলকাতা থেকে অন্ডালে কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে সড়কপথে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে সামান্য দূরে কাল্লা মোড়ের কাছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত অধ্যাপকদের রাজ্য সংগঠন ওয়েপকুপার জেলা সভাপতি অধ্যাপক বীরু রজক ও তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সমর্থকরা রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখানো হয় ।

রাজ্যপালের গাড়ি লক্ষ্য করে “রাজ্যপাল গো ব্যাক” স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এই সব বিক্ষোভকারী ছাত্র ও অধ্যাপকদের হাতে ছিল নানা ধরনের স্লোগান লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন।

অধ্যাপক সংগঠনের বীরু রজক ও ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়রা বলেন, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি। সেই অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। তার নির্দেশেই এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সমাবর্তন করাচ্ছেন।

বর্তমানে এই কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্থায়ী উপাচার্য নেই। আচার্য কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এখন সারাদেশে এমসিসি বা মডেল কোড অফ কনডাক্ট তথা আদর্শ আচরণ বিধি কার্যকর রয়েছে। তখন এই ধরনের অনুষ্ঠান করা যায় না। রাজ্য সরকার বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আমরা বিরোধিতা করছি। একই সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। তাই রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখালাম। তার উদ্দেশ্যে গো ব্যাক স্লোগান দিয়েছি।

এই বিষয় পরে রাজ্যপাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “সব সময় সব জায়গায় পড়ুয়াদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। আমি অবশ্যই তাদের আন্দোলনের মান্যতা সবসময় দিয়ে থাকি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ধরনের আন্দোলন করা ঠিক নয়। সবাই যে কালো পতাকা দেখাচ্ছে এমনটা কিন্তু নয়। বেশি সংখ্যায় পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আছে। যারা এদিন এই আন্দোলন করছে তাদের
“মিসলিড বা ভুল” বোঝানো হচ্ছে। তারা যদি তাদের বক্তব্য নিয়ে সরাসরি আমার কাছে আসত তাহলে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে সব বিষয়গুলো নিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারতাম।”

তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুবই পরিশ্রম করেন। আমিও রাজ্যপাল হিসেবে সবসময় রাজ্যের মানুষ হয়ে অনেক পরিশ্রম ও কাজ করি। দুজনে আমরা একই জায়গায় প্রয়োজনে অবশ্যই যাই। কিন্তু আমি আরও একবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ বা তার পুনর্নিয়োগ বা তাকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনো ভূমিকা বা ক্ষমতা নেই।”

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত এবং আইন-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই আমার দফতরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলো আমি দেখে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।”

এই সমাবর্তন উৎসবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজিস্টার চন্দন কোনার-সহ কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের দুই ডিন।

এই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল তার ভাষণে, কাজি নজরুল ইসলামের নাম করে বলেন, “আমি খুব গর্বিত যে তাঁর নামের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে। এদিন ২৪৯ জন পড়ুয়াকে শিক্ষায় বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ।”

এদিকে এদিন রাজ্যপালের নিরাপত্তায় ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাস্তায় ব্যারিকেড করে পুলিশকর্মীরা বিক্ষোভকারীদেরকে আটকে রাজ্যপালের কনভয়কে কোনো বাধা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকিয়ে দেন।

এই বিক্ষোভ ছাড়াই অন্য কোন ঘটনা ঘটেনি। অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অনুষ্ঠানের সূচি জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী রাজ্যপাল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সব অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপাল সড়কপথে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্ডাল বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে তিনি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *