Press "Enter" to skip to content

হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সুন্দরবনে বাঘের কামড়ে মৃত দুই পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ তুলে দিল বন দফতর

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,কুলতলি : কলকাতার উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে সুন্দরবনে বাঘের কামড়ে মৃত দুই পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের ৫ লক্ষ টাকা তুলে দিল বন দফতর।

সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের ক্ষোভকে বাড়তে না দিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত মৎস্যজীবী অমল দন্ডপাটের বিধবা পত্নী তপতী দন্ডপাট ও বাঘের আক্রমণে নিহত আরেক মৎস্যজীবী দিলীপ সর্দারের বিধবা পত্নী শেফালি সর্দারের হাতে সোমবার ক্যানিং বনদফতরের অফিস থেকে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

এর আগে আদালত আদেশ দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দিয়েছিলোবন দফতর। এবার দেরি করায় মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।আর এই সব মৎস্যজীবি মানুষের পাশে থেকে তাদের প্রাপ্য অধিকারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এপিডিআর নামে একটা মানবাধিকার সংগঠন।উল্লেখ্য, গত ৭ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজ্লাসে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত দুজন মৎসজীবীর বিধবা (বাঘ বিধবা) স্ত্রীদের সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলার শুনানি হয়।

দুটি মামলাতেই বিচারপতি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারী দের পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি পূরণ নি:শর্তে মিটিয়ে দিতে হবে। আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী ছিলেন কৌশিক গুপ্ত এবং শ্রীময়ী মুখোপাধ্যায়।প্রথম আবেদনকারীর নাম শেফালী সর্দার।সুন্দরবনের কুলতলির কাটামারি এলাকার বাসিন্দা।তিনি আদালতে আবেদন করে জানান, তাঁর স্বামী দিলীপ সরদার সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন।তিনি সুন্দরবনের নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য বনদপ্তরের বৈধ অনুমতি পত্র (বিএলসি) নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি বাঘের আক্রমণে নিহত হন। কিন্তু প্রায় দু বছর ধরে বনদফতর সহ সমস্ত সরকারি দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও তিনি কিছুতেই কোনো রকম ক্ষতিপূরণ পাননি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখিয়ে বলেন যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা আছে যে মাথায় আঘাত পেয়ে দিলীপ সরদার মারা গেছে। কাজেই বাঘের আক্রমণেই মারা গেছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাঁর এই বক্তব্যের উত্তরে বিচারপতি পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পুরোটা পড়ে শোনান এবং পুলিশ রিপোর্ট পড়ে শোনান। পুলিশ রিপোর্টে পরিষ্কার বলা আছে,বাঘের আক্রমণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং পুলিশই মৃতদেহ উদ্ধার করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অন্য অংশে এটাও পরিষ্কার করে দেওয়া আছে যে বাঘের আক্রমণে দিলীপ সরদারের মৃত্যু হয়েছে।কাজেই সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী অবশ্যই পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতি পূরণ দিলীপ সরদারের বিধবা স্ত্রীর প্রাপ্য। কাজেই আবেদনকারীকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ৫ লক্ষ টাকা অবশ্যই মিটিয়ে দিতে হবে।দ্বিতীয় মামলায় আবেদনকারী ছিলেন সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের মৈপীঠের বাঘ বিধবা তপতী দণ্ডপাট। তিনি আদালতে আবেদন করে জানান যে তাঁর স্বামী অমল দণ্ডপাট রাজ্য বনদপ্তরের অনুমতিপত্র ( বিএলসি)নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের নদীতে। কিন্তু ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২১ তাদের নৌকাতে বাঘ হামলা চালায়। অন্যরা পালিয়ে গেলেও অমলবাবু বাঘের আক্রমণে গুরুতর আহত হন। তারপরে ২০২২ সালের পয়লা জানুয়ারি তিনি মারা যান। এই মামলার ক্ষেত্রে সরকারি উকিলের বক্তব্য ছিল যে অমল দণ্ডপাট সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে নিষিদ্ধ ‘কোর’ এলাকায় ঢুকেছিল। কাজেই তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন, এই আদালতের আদেশ আছে যে কোর এলাকা বা সাধারণ এলাকা যেখানেই বাঘের আক্রমণে কেউ মারা যাবে তারই সরকারি ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হবে। কাজেই তিনি ‘কোর’ এলাকায় ঢুকে ছিলেন কিনা বা ‘কোর’ এলাকায় মারা গেছিলেন কিনা বা তাঁর জঙ্গলের যাওয়া অনুমতি ছিল কি ছিল না – এটা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এটা দেখার কোন ব্যাপার নেই।

অমল দণ্ডপাট বাঘের আক্রমণেই মারা গিয়েছিল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং অন্য সমস্ত কাগজপত্র থেকে এটা পরিষ্কার। কাজেই ক্ষতিপূরণ তাঁর বিধবা স্ত্রী তপতীদেবীর অবশ্যই প্রাপ্য। কৌশিক বাবুর এই সওয়াল মেনে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন,সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার দরিদ্র মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলে গিয়েছিল, মাছ ধরতে গিয়েছিল এটা পরিষ্কার। এবং এক্ষেত্রে সে অনুমতি নিয়েই গিয়েছিল। কাজেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই তাঁর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য।বিচারপতি সব্যসাচীভট্টাচার্য তাঁর আদেশে বলেন,অমল দণ্ড পাটের বিধবা স্ত্রী তপতী দণ্ডপাটের সরকারি নিয়ম মত ক্ষতিপূরণ অবশ্যই প্রাপ্য এবং সরকারকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ঘোষিত পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ অবশ্যই মিটিয়ে দিতে হবে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *