জঙ্গলমহলে হাতির সমস্যা লেগেই রয়েছে। প্রতীকী ছবি
বিশেষ সংবাদদাতা: ঘটনাটি বাম আমলের। তখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় কংগ্রেস। এখন রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় তৃণমূল আর কেন্দ্রে বিজেপি। অথচ ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ নিয়ে সবার মুখে কুলুপ আঁটা।
হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা জঙ্গলমহলবাসীর একাংশের মতে, এই এলিফ্যান্ট রিজার্ভ বাস্তবায়িত না হলে গ্রামাঞ্চলের জনজীবন নিস্তার পাবে না। হাতির হানায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ঘর ভাঙচুর এমনকি মানুষের প্রাণহানি জঙ্গলমহল এলাকায় লেগেই রয়েছে। এর সমাধানের উপায় কী?
উঠে আসছে বাম আমলের ঘোষিত ‘ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’-এর কথা। ওয়েবসাইটে এই রিজার্ভের কথা ফলাও করে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম- এই চারটি ডিভিশন এলাকার ১১৪.০৬ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল ও সংলগ্ন ১৪৩৬ বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই এলিফ্যান্ট রিজার্ভটি রয়েছে। ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটিকে রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করে।
গত বছর মার্চ মাসে বেলপাহাড়ি এলাকায় একই দিনে হাতির হানায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পরে ঝাড়গ্রামে বনবিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। হাতির স্থায়ী সমাধানের জন্য উঠে আসে ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভের কথা। সংবাদে প্রকাশ সে সময় বনমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালের কাজ এটা। বাম সরকারের এটা করতে পারেনি। কারণ এটা বাস্তবায়িত করার জন্য কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে। বনদফতর কি করে করবে? বনদফতরের পরিকাঠামো নেই।
এর পরই শুরু হয় রাজ্য-কেন্দ্র চাপান উতোর। সে সময় লোকসভার অধিবেশনে বিজেপির ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম জঙ্গলমহলের হাতির সমস্যা নিয়ে লোকসভায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ কেন বাস্তবায়িত হয়নি, তা প্রশ্ন করেন। এর প্রত্যুত্তরে মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব পশ্চিমবঙ্গের বন সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণ (হেডকোয়ার্টার) আধিকারিক শৈলেশ এস আনন্দের কেন্দ্রকে পাঠানো চিঠি দেখিয়ে বলেন, সেখানে ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভের অস্তিত্ব রয়েছে।
এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, বাম আমলে এই রিজার্ভের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো কোটি কোটি টাকা তাহলে কোন খাতে কোথায় খরচ হয়েছে? অবসরপ্রাপ্ত এক বন আধিকারিক বলেন, উপর মহলের সদিচ্ছার অভাব ও কিছু মানুষের বাধার জন্য ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভের ঘোষণা ইম্প্লিমেন্ট করা যায়নি। যা হয়েছে তা খাতায়-কলমে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে কী বাম আমলের এই প্রকল্প নিয়ে বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে? যদি হয়েই থাকে তাহলে তা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না!
Be First to Comment