উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়: সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলল এক মানবাধিকার সংগঠন। আগামী এপ্রিল মাস থেকে অন্য বারের মতন এ বারও সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারবেন সুন্দরবনের মৌলেরা। আগামী ৫ এপ্রিল থেকে টানা একমাস ধরে দুটো পর্যায়ে এই মধু সংগ্রহ অভিযান চলবে সুন্দরবনের জঙ্গলে।
গত বছর সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা মধুর দাম কিছুটা বাড়িয়েছিল ও বনদফতর। কেজি প্রতি ৪৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছিল গতবারে।তবে এবারে সুন্দরবনের মধু জিআই তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এবারে মধুর দাম আর বাড়ানো হবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কোনো সংবাদ নেই বনদফতর সূত্রে।
তবে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মধু সংগ্রহ হয়েছিল। গত বছর মধুর দাম বাড়ার কথা ঘোষণা করায় মধু সংগ্রহ হয়েছিল রেকর্ড পরিমাণে।৭৫ টি দল গতবার মধু সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিল। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকায় ৫৭৬ জন গতবার জঙ্গলে গিয়েছিল মধু সংগ্রহ করতে। আগে কেজি প্রতি ১৮০ টাকা করে মধুর দাম পেত মৌলেরা বন দফতর থেকে।এর সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে পারিশ্রমিক হিসাবে।গত বছর থেকে মধুর গুণমান বিচার করে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে মধুকে। ২৩ শতাংশের বেশি জল থাকলে সেই মধু বন দফতর থেকে কেজি প্রতি ২২৫ টাকা,২৩ শতাংশের কম জল থাকলে সেই মধুর দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা করে পেত মৌলেরা বনদফতর থেকে। পাশাপাশি প্রতি কেজিতে আলাদা করে কুড়ি টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জন্স জাস্টিন বলেন, গত বছর সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে ভালোই মধু সংগ্রহ হয়েছিল। এ বছর ও অনেক মধু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।মার্চ মাস থেকে এবছর মৌমাছির আনাগোনা অনেক বেশি জঙ্গলে।ফলে এবারও বেশি মধু পাওয়া যাবে।তবে গত বছরের মতন এ বছর ও মৌলেদের জন্য বিমা ও নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে বন দফতর থেকে।
এ ব্যাপারে কুলতলির কয়েকজন মৌলে জানালেন, গত বছর ভালো মধু হয়েছিল দাম বাড়ানোর জন্য,এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। এ বছর ও আমরা মধু সংগ্রহে যাব।মৌলেদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে বনদপ্তর। অপারেশন গোল্ডেন হানি নামে বিশেষ ব্যবস্থা গত বছর থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মৌলেরা সুন্দরবনের যে এলাকায় মধু সংগ্রহ করবে বন দফতরের একটি টহলদারি দলও সেই এলাকায় থাকবে। যদি ওই মৌলেরা কোনো সমস্যায় পড়ে তাহলে সেই টহলদারি দল তাদের সাহায্য করবে। এছাড়া মধু সংগ্রহের পরে বাংলাদেশের জলদস্যুরা যাতে মধু লুট করতে না পারে সে দিকে ও নজরদারি চালাবে এই দল।তাছাড়া মৌলেদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে বিমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বন দফতর থেকে।
তবে মাত্র একমাস কেন জঙ্গলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে মৌলেদের, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। সুন্দরবনের মৌলেদের পাশে থেকে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছে এপিডিআর নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। এই সংগঠনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল বলেন, সুন্দরবনের জঙ্গলে নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মধু সংগ্রহ করে আনে মৌলেরা। তাই এই মৌলেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে, মধুর দাম আর ও বাড়াতে হবে এবং এক মাসের বেশি সময় তাদেরকে অনুমতি দিতে হবে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য। কারণ বিকল্প কর্মসংস্থান নেই সুন্দরবনের মানুষের।
Be First to Comment