বার্নপুর : ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হল গলায় দড়ি দেওয়া এক নৃত্য শিক্ষক বা ড্যান্স টিচারের ঝুলন্ত দেহ। রবিবার রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে হিরাপুর থানার বার্নপুরের রাধানগর রোড এলাকায়।
কলকাতার জোড়াবাগান থানার শোভাবাজার হাটখোলার রামধন খাঁ লেনের বাসিন্দা মৃত নৃত্য শিক্ষকের নাম চিরঞ্জীত চৌধুরী (৩৫)। সোমবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নৃত্য শিক্ষকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। মৃত নৃত্য শিক্ষক বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তানও আছে।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার বাসিন্দা নৃত্য শিক্ষক চিরঞ্জীত চৌধুরী বার্ণপুরের রাধানগর রোড এলাকায় জনৈক শুভাশিস দের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত ২ মে তিনি এই বাড়ি ভাড়া নেন। তার আগে তিনি অন্য জায়গায় থাকতেন। রাধানগর রোডে রাধানগর এ্যাথলেটিক ক্লাবের তিনতলার একটি ঘরে তিনি একটি ড্যান্স একাডেমি চালাতেন। তিনি নামকরা একটি টিভি চ্যানেলে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের কোরিওগ্রাফারও ছিলেন।

আরও জানা গেছে, চিরঞ্জীতবাবু প্রতি শনিবার কলকাতা থেকে বার্ণপুরে আসতেন। রবিবার সারাদিন ধরে নাচের ক্লাস করে, সোমবার কলকাতা ফিরে যেতেন। সেইরকম ভাবেই গত শনিবার তিনি আসেন। রবিবার বিকেলের পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। এদিকে তিনি যাঁদের নাচ শেখাতেন, তাঁরা অভিভাবকদের সঙ্গে ক্লাবে চলে আসেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরে তিনি না আসায়, কয়েকজন অভিভাবক তার খোঁজ করতে ক্লাবের অদূরে ভাড়াবাড়িতে যান। তারা দেখেন ঘর ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। ডাকলেও ভেতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে তারা বাড়ির মালিককে গোটা বিষয়টি বলেন।
এরপর বাড়ির মালিক হিরাপুর থানায় খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আসে। বাড়ির মালিক সহ অন্যদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে দেখা যায়, চিরঞ্জীত চৌধুরী ঘরের মধ্যে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন। তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাড়ির মালিক ও পুলিশ কলকাতায় নৃত্য শিক্ষকের বাড়িতে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে তাদেরকে আসতে বলেন। সেই মতো স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যরা সোমবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন।
কী কারণে নৃত্য শিক্ষক এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তার পরিবারের সদস্যরা বলতে পারেননি। তারা এই ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশায় রয়েছেন। তারা কোনও অভিযোগও করেননি পুলিশের কাছে। পুলিশ নৃত্য শিক্ষকের ভাড়াবাড়ি থেকে তার একটি ব্যাগ ও ল্যাপটপ পায়।তাছাড়া সন্দেহজনক তেমন কিছু বাড়ি থেকে পাওয়া যায়নি।
নৃত্য শিক্ষক যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তার মালিক শুভাশিস দে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, গত ২ মে নৃত্য শিক্ষক আমার বাড়ি নেন। রবিবার বিকেলের পরে কয়েকজন অভিভাবক এসে তার খোঁজ করছিলেন। তখন আমি হিরাপুর থানায় ফোন করে খবর দিই। পরে পুলিশ আসে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই নৃত্য শিক্ষক কোনও কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। যে কারণে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।
পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে এক পুলিশ আধিকারিক এদিন জানান । এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।



Be First to Comment