অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা, কুলটি ও আসানসোল: কোলিয়ারিতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া দুই ঠিকাকর্মীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে চিনাকুড়ি ১/২ নম্বর কোলিয়ারিতে ধর্নায় বসলেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক ডা. অজয় পোদ্দার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়-সহ এলাকার নেতা ও কর্মীরা এবং কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।
একই ভাবে এ দিন সকালে কোলিয়ারিতে আসেন জামুড়িয়ার তৃণমুল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা কেকেএসসির সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিং, আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ তথা সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী এবং কুলটিতে প্রাক্তন বিধায়ক তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁরাও মৃত দু’জনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতি পূরণ ও চাকরির দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপি বিধায়ক বলেন, যে কোম্পানির হয়ে এই দুজন চাকরি করতেন, সেখান থেকে ক্ষতি পূরণ পেতে অনেক সময় লাগবে। আমরা চাই ইসিএলের কাছ থেকে ক্ষতি পূরণ। সেটা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

বংশগোপাল চৌধুরী এবং উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই দু’জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইসিএল কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
এদিকে, এদিন সকালে কুলটি থানার পুলিশ শাঁকতোড়িয়া ইসিএলের হাসপাতাল থেকে দুই কর্মীর মৃতদের ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। দুপুর নাগাদ ময়নাতদন্ত হওয়ার পরে পুলিশ আকাশ বাউরির দেহ তার ভাই বিবেক বাউরি হাতে এবং অনিল যাদবের দেহ ছেলে কুনাল যাদবের হাতে তুলে দেয়।
অন্যদিকে, এদিন সকালে দুই ঠিকা কর্মী ক্ষতিপূরণ, চাকরি সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার শুরু থেকেই সিটু, আইএনটিইউসি , বিএমএস বা ভারতীয় মজদুর সংঘর মতো স্বীকৃত ইউনিয়নের নেতারা বারবার ইসিএল আধিকারিকদের কাছে দাবি করেন, ঠিকাদারি সংস্থার প্রতিনিধিদের এখানে ডাকা হোক। কিন্তু তাদের দাবি না মানায় ও ইসিএল ওই ঠিকা সংস্থাকে আড়াল করার চেষ্টার জন্য প্রতিবাদে বৈঠক বয়কট করে তিনটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বয়কট বেরিয়ে যান।
এরপর দুপুরে বৈঠক শেষে আইএনটিটিইউসি, ইউটিইউসির, কেকেএসসি ও বাউরি সমাজের প্রতিনিধিদের ইসিএল কতৃপক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি হয়। তাতে বলা হয়েছে, নিয়ম মেনে মৃত দু’জনের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতি পূরণ, একজনকে চাকরি ও শবদাহ-সহ অন্যান্য কাজের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে জেবিসিসিআই (যুক্ত পরামর্শদাতা কমিটি, ইসিএল) সদস্য সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, মৃতদের একজনের বয়স ৬৪ বছর। তাকে কি করে গিয়ারের উপরে উঠিয়ে এই ধরনের কাজে লাগানো হয়েছিল? তাকে কেনও সেফটি বেল্ট দেওয়া হয়নি।
ফলে ২২০০ ফুট নিচে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যান। এটা একেবারে লেবার ও শ্রম আইন বিরোধী কাজ। এজন্য আমরা ডিজিএম বা ডিরেক্টর অফ মাইনস্ সেফটি কাছে চিঠি লিখে আলাদা করে কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চাইবো ।
প্রসঙ্গতঃ, কয়লা তোলার আগে পুরনো হেড গিয়ার মেরামত করতে কয়লা খনির ভেতরে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় একটি বেসরকারি কোম্পানির দুই ঠিকা কর্মীর। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটে এশিয়ার গভীরতম বা ডিপেস্ট কুলটিতে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার চিনাকুড়ি ১/২ নং কোলিয়ারিতে। মৃত দুজনের নাম আকাশ বাউরি (৩২) ও অনিল যাদব ( ৬৪ )।
আকাশের বাড়ি কুলটি থানার পাটমোহনার মিঠানি ও অনিলের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে । এই ঘটনার পরে মৃত দুই যুবকের পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা কোলিয়ারিতে এসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছিলেন।
তাদের দাবি, মৃত দুজনের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও নিয়ম মেনে একজনকে চাকরি দিতে হবে। এই বিক্ষোভের জেরে কোলিয়ারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুলটি থানার পুলিশ এলাকায় আসে।
এই ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সিটু সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কয়লাখনির নিরাপদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে ইসিএলের কোন যোগ না থাকলেও , যেহেতু কোলিয়ারিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাই তদন্ত করা হবে বলে সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী জানিয়েছেন।

ঘটনার পরে এলাকায় আসেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক ডা. অজয় পোদ্দার। তিনি এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। জানা গেছে, মোট ৫ জন এখানে মেরামতের কাজ করছিলেন। তার মধ্যে মাত্র ১ জন সেফটি বেল্ট পড়েছিলেন। ৫ জনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে ডিজিএমএস বা ডিরেক্টর অফ মাইনস্ সেফটির নির্দেশ মানা হয়নি।




Be First to Comment