অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা : আসানসোলে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক মহিলা কর্মীর উপরে বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ উঠল ।
বহিরাগতদের বিরুদ্ধে একইভাবে উপাচার্যকে হেনস্তা, অন্য অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও শিক্ষা কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি করারও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা। যদিও, যাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তারা কেউ বহিরাগত নয় বলে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির তরফ দাবি করা হয়েছে।
এও বলা হয়েছে তারা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা। গন্ডগোলের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার।
জানা গেছে, এদিন আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল । সেই উপলক্ষ্যে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য ডাঃ দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের মূর্তিতে মাল্যদান করেন। তারপর তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে কাজি নজরুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত নানা আলোচনা করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় অতর্কিতে বেশ কিছু বহিরাগত যুবক পড়ুয়া বলে পরিচয় দিয়ে জোর করে কনফারেন্স হলের দরজা ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আরো অভিযোগ, তারা হলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিস ভাঙচুর করে ও উপাচার্যকে শাসাতে থাকে। তারা জানতে চায়, দরজা বন্ধ করে হলের ভেতরে কি করা হচ্ছে?

তখন সেখানে থাকা অন্য অধ্যাপক ও শিক্ষা কর্মীরা বলেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তখন ঐ যুবকেরা জানতে চায়, কেন করা হচ্ছে? উপাচার্য কি মিটিং করছেন? এইসব করা চলবে না। এরপর ওই যুবকের এগিয়ে যেতে গেলে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা বাধা দেন। তখন তাদের উপরে হামলা চালানো হয় বলে দাবি। এর ফলে এক প্রতিবন্ধী মহিলা কর্মী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনায় পরে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনার পরেই কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামন অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বলেন, এই হামলা মনে নেওয়া যায়না। প্রতিবন্ধী মহিলা কর্মীকে মারা হয়েছে। উপাচার্যকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।
এই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী তথা উপাচার্যের গাড়ির চালক গনেশ বাউরি বলেন, আমরা সবাই এসেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে। হঠাৎ সেখানে বেশ কয়েকজন বহিরাগত যুবক ঢুকে পড়ে। মারধর ও ধাক্কাধাক্কি করে। আমরা পাল্টা করতে পারতাম। কিন্তু আমরা কিছু করিনি।
উপাচার্য ড. দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস এদিন। তাই ২৯ জুলাইয়ে পরে এদিন আসি। সবাইকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করছিলাম। তখন বেশ কিছু বহিরাগত যুবক হলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়। অন্য অধ্যাপক ও শিক্ষা কর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও মারধর করা হয়েছে। এক মহিলা কর্মীকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে। আমি আসানসোল উত্তর থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে।
তিনি আরো বলেন, এদিন একটা রাজনৈতিক দল সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে। তাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ ছিলো অফিসে জন্য। তাই এসেছিলাম। কোন মিটিং করিনি। তারপরেও এই ঘটনা।
এদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা টিএমসিপির সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, ঐ যুবকেরা কেউ বহিরাগত নয়। সবাই পড়ুয়া। হল বন্ধ করে কি হচ্ছিলো, তা জানতে তারা ওখানে যায়। আমরা দাবি করে আসছি, কলেজ ফান্ডের হিসাব দিতে হবে বলে। তারজন্য আন্দোলন করছি। তা না করে উপাচার্য অনুষ্ঠান করছেন। তিনি আরো জানা, আমাদের দাবি মানতেই হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই থেকে টিএমসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে। তারা উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি। মাঝে একদিন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু আন্দোলনের চাপে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।




Be First to Comment