বাজেট পেশ করলেন মেয়র। নিজস্ব ছবি
অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা: আসানসোল পুরনিগমের চলতি মার্চ মাসের পুর কাউন্সিলারদের মাসিক বোর্ড বৈঠকে আজ বুধবার ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করা হয়।
পুর আইন মেনে মেয়র বিধান উপাধ্যায় এদিন ২০২৪-২০২৫ আর্থিক বছরের আয় ব্যয় বরাদ্দের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত বাজেট ও ২০২৩-২০২৪ এর সংশোধিত বাজেট সভার অনুমোদনের জন্যি পেশ করেন। সভা পরিচালনা করেন পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। পুর কমিশনার রাজু মিশ্র ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দুই ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক, মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলাররা।
যে মূল বিষয়গুলির উপর বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে তা হল, অনাদায়ী বকেয়া আদায়, ক্লিন আসানসোল গ্রিন আসানসোল, প্রতিটি বাসগৃহে জল-সংযোগ, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ, পরিকাঠামো উন্নয়ন (যেমন সড়ক, ড্রেন, স্ট্রিট লাইট প্রভৃতি), স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক এবং অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। এই বাজেটে ২০২৪-২০২৫ আর্থিক বছরের জন্য মোট ৪২১কোটি ৬২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেট আনুযায়ী এই আর্থিক বছরের আয়ের সংস্থান ধরা হয়েছে মোট ৪২১ কোটি ৫ লক্ষ ৬৫ টাকা।
অর্থাৎ বাজেট ঘাটতির পরিমান ৫৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।
পুর বাজেটে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য নিষ্কাষন ব্যবস্থাপনায় কঠিন বর্জ্য-দুরীকরনের মাধ্যমে স্বচ্ছ এবং দূষন মুক্ত শহর গড়তে স্যানিটারি দপ্তরের জন্য একটি আধুনিক ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গোটা ব্যবস্থার রুপায়নে এই বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যয় ১৭ কোটি টাকা।
আসানসোল পুর এলাকায় জল প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি ঘরে পানীয় জল নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের জন্য পাঁচটি আইজি তৈরী করা হবে। আসানসোলের ডামরায় ২টি, বার্ণপুরের কালাঝড়িয়া ও ভূতাবুড়ি এবং কুলটির ডিসেরগড়ে ১ টি করে হবে।
এক্ষেত্রে পুরনিগম সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা নিরবিছিন্ন পানীয় জন সরবরাহের লক্ষমাত্রা নিয়েছে। মোট প্রস্তাবিত বাজেট ব্যায়ের পরিমান ২০২৪-২০২৫ আর্থিক বছরে ১৩০.০০ কোটি টাকা। পরিবেশ গত উন্নয়নে আসানসোলের গাড়ুই নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা পাথর ও বোল্ডার দিয়ে বেঁধে প্লাবন রোধ এবং জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১.৬৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ ফিফটিন অর্থ কমিশনের খাত থেকে ব্যয় হবে।
এছাড়াও আসানসোল শহরের জিটি রোড লরেটো কনভেন্ট স্কুলের বিপরীতে উদ্যান নির্মান করা হচ্ছে। যার জন্য প্রস্তাবিত ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১.২৫ কোটি টাকা। এই টাকা ১৫ (ফিফটিন) অর্থ কমিশনের ফান্ড থেকে ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হল। এছাড়াও সেনরেল রোডের এইচএলজি হাসপাতাল মোড় এলাকাকে সম্পূর্ন নতুন রুপে সৌন্দর্যায়ন হবে। এর প্রস্তাবিত ব্যয় প্রাথমিক ভাবে ২৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে।
জিটি রোডে রোটারি গুলিতে ফোয়ারা তৈরি ও সৌন্দোর্য্যায়ন জন্য বাজেটে ৩০ লক্ষ টাকা প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বাংলা, উর্দু এবং হিন্দি একাডেমির ব্যাবস্থাপনা এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বাৎসরিক ৫ লক্ষ টাকা করে অনুদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে ।
আসানসোল পুরনিগমের চলতি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে আরো নতুন চারটি ইউপিএইচসি বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা হবে। যেগুলি হবে ডামরা, ডিহিকা, ধেনুয়া ও মরিচকোটায়। প্রতি ওয়ার্ডে ( ইউপিএইচসি আছে এমন ওয়ার্ডে বাদে ) একটি করে ইউএইচডবলুসি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এছাড়াও পুরবাসীদেরকে সুলভে উন্নতমানের আধুনিক স্বাস্থ্য পরিসেবা দেওয়ার জন্য ১৯ নং জাতীয় সড়কের জুবিলি মোড় সংলগ্ন এলাকায় একটি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। যার বিস্তারিত পরিকল্পনা, আনুমানিক ব্যয় তথা পরিচালন পদ্ধতি দ্রুত তৈরী করা হবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নে ক্রীড়া সরঞ্জাম বিলি, পুরনিগমের তত্ত্বাবধানে সাঁতার, ব্যাটমিন্টন ইত্যাদির প্রশিক্ষণ, শিল্পাঞ্চল রত্ন পুরষ্কার , আর্ট গ্যালারি, খেলার মাঠগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক উৎসব প্রেক্ষিতে অর্থ সাহায্য বজায় রাখা হয়েছে। বাজেটে এরজন্য বিভিন্ন খাতে ১৫লক্ষ, ১৩লক্ষ ও ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
আসানসোল শহরের উন্নয়নে কয়েকটি বিশেষ পরিকল্পনা রূপায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শহরর প্রবেশ পথে কালীপাহাড়ি মোড়ে বিশ্ব বাংলা তোরণ নির্মাণ। কল্যাণেশ্বরীতে পিপিপি মডেলে গেস্ট হাউস তৈরি করা (প্রাথমিক ব্যয় আনুমানিক ১.৮৫ কোটি টাকা )। একইভাবে পিপিপি মডেলে দীঘার সমুদ্রসৈকতে গেস্ট হাউস নির্মাণ (প্রাথমিক ব্যয় আনুমানিক ১.২৫ কোটি টাকা।
শহরের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠ জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাত্যাহিক অসুবিধার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বাজেটে সড়ক, জলনিকাশী এবং স্ট্রিট লাইট সংক্রান্ত পরিকাঠামোগত ব্যয় এই বাজেটে যথাক্রমে ৪১ কোটি , ১২ কোটি ৫০ লক্ষ এবং ৬ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে।
পুর পরিসেবার উন্নয়নে পেপারলেস সার্ভিসের দিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনলাইন পরিসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। বোরো অফিসগুলিতেও সমস্ত রকমের পরিসেবা প্রদান এবং কর জমা দেওয়া, ট্রেড লাইসেন্স পরিসেবা প্রভৃতি চালু করা হয়েছে। হাতে লেখা রসিদের পরিবর্তে কম্পিউটার রসিদ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই পুরভবনে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’-র মাধ্যমে নাগরিক বান্ধব পরিসেবা প্রদান চালু হয়েছে। শহরে বিভিন্ন স্থানে উন্নত মানের পার্কিং জোন তৈরীর ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ রূপায়নের রূপরেখা তৈরি হয়েছে।
বাজেটে বলা হয়েছে সব অস্থায়ী কর্মীদের কাঠামোগত বেতন বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি সকল অস্থায়ী কর্মীদেরকে ইপিএফের আওতায় আনা ও কর্মজীবনে অবসর গ্রহনের সময় (অবসর গ্রহনের আগে পাঁচ বছর পুরনিগমের চাকরি করেছেন এমন কর্মীদের মৃত্যু বা দুঘটনাজনিত কারনে অবসর নিতে হলে এককালীন আড়াই লক্ষ (২.৫০) টাকা অবসর সাম্মানিক হিসাবে প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বর্তমান মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য কর্মীদের ক্ষেত্রে যাদের মাসিক ভাতা ইতিমধ্যেই ৫০০ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে মাসিক আরো ২০০ টাকা করে এবং অভান্ত নব নিযুক্ত কর্মীদের মোট ৭০০ টাকা করে বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
আরসিএইচে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সাম্মানিক ২৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ৫৬০০ টাকা করা হয়েছে।
পুরনিগমের নিজস্ব আয়ের প্রেক্ষিতে চলতি বাজেটে সরকারি ফান্ড বাদে বেশ কিছু প্রস্তাব নেওয়া হয়েছ। যার মধ্যে পুর কর বাবদ আয় ২৮ কোটি, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আয় ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা, মিউটেশন বাবদ আয় ৪ কোটি, বিন্ডিং প্ল্যান সংক্রান্ত আয় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, বানিজ্যিক জল কর-এ আয় ৩ কোটি টাকা ও পার্কিং জোন ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।
পরে মেয়র ও চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, পুরনিগমের ১০৬ টি ওয়ার্ডে সামগ্রিক উন্নয়ন ও পুর পরিসেবা আরো ভালো করতে সব পরিকল্পনা এবারের বাজেটে প্রস্তাবাকারে নেওয়া হয়েছে।
Be First to Comment