প্রতিবাদে বিক্ষোভ টিএমসিপি-র, দীর্ঘক্ষণ তালা বন্দী উপাচার্য ও অধ্যাপকরা। নিজস্ব ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা, আসানসোল : রাজ্য সরকার তথা উচ্চ শিক্ষা দফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসির মিটিং করা হয় বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপাচার্য দেবাশিস বন্দোপাধ্যায় , রেজিস্টার-সহ বেশ কয়েকজন অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়।
উপাচার্যের চেম্বারের পতাকা নিয়ে টিএমসিপি জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় ও আসানসোল ব্লক সভাপতি শিলাদিত্য রায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । এমনকি বেশ কিছুক্ষণের জন্য উপাচার্যের চেম্বারের বিদ্যুতের লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল বলে উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ।
যদিও টিএমসিপির জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় তালা বন্ধ করা বা বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ঘেরাও অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি এ দিন সকাল ১০ টা থেকে ইসির বৈঠক না করার দাবি জানিয়ে।”
জানা গিয়েছে, ইসি বৈঠক না করার জন্য রাজ্য সরকারের লিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিন উপাচার্যের চেম্বারে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসির বৈঠক করেন। এই বৈঠক শুরু হয় দুপুর আড়াইটা থেকে।
টিএমসিপির সদস্য পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদেরকে উপাচার্য আগে জানিয়েছিলেন এই বৈঠক এ দিন হবে না। কিন্তু বৈঠক হওয়ার খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেম্বারের সামনের গেটের কাছে টানা অবস্থানে বসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। রাজ্যের শাসক দলের নামে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হন টিএমসিপি নেতৃত্ব।
এই প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকার বলেছে ইসি বৈঠক না করার জন্য। উপাচার্য আমাদেরকেও বলেছিলেন বৈঠক হবে না। সেখানে তিনি দরজা বন্ধ করে কেন ইসির বৈঠক করছেন। শুধু তাই নয়, কয়েকটি বিভাগে দ্বিগুণ, তিনগুণ হারে পড়ুয়াদের ফি বাড়ানো হয়েছে। তা নিয়ে আমরা যখন প্রতিবাদ করেছি তখন কিন্তু এই বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এই ধরনের বৈঠক একজন উপাচার্য করছেন। তখন আমরা এর প্রতিবাদে সরব হয়েছি। তাই সকাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। রাত হলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। কয়েকটি কলেজের প্রতিনিধিরা এসেছেন। এরপর সমস্ত কলেজের পড়ুয়ারা এসে বড় আন্দোলনে নামবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দাবি উপাচার্যকে লিখে দিতে হবে এ দিন তিনি ইসি বৈঠক করেননি। আর যদি করে থাকেন তা হলে তিনি কেন আমাদের মিথ্যে কথা বলেছিলেন? রাজ্য সরকারের নির্দেশ কেন তিনি মানলেন না, তাও জানাতে হবে আমাদেরকে।”
একইভাবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া টিএমসিপির আসানসোল ব্লক সভাপতি শিলাদিত্য রায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তিনি দাবি করেন, উপাচার্য পড়ুয়াদের কথা না ভেবে রাজ্যপালের কথায় দরজা বন্ধ করে গোপনে এই ধরনের বৈঠক করলেন।
অন্য দিকে, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে ইসির তিনটি বৈঠক করেছি। এ বারের বৈঠক করা নিয়ে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়। তখন আমাদেরকে বলা হয়েছিল এজেন্ডা পাঠাতে। সেইমতো এজেন্ডা পাঠানো হয়েছিলো। এর পর রাজ্য সরকারের তরফে বৈঠক করতে মানা করা হয়। কিন্তু এ দিনের বৈঠক করাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল।”
Be First to Comment