আসানসোল : আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়াকে ৫৯,৫৬৪ ভোটে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা । মূলত পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, জামুরিয়ার ভোটে জয় এসেছে বিহারীবাবুর।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। ২০২২ সালে বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করলে আসানসোল কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে ৩ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করে সাংসদ হন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। এবার লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই এই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিহারী বাবুর নাম ঘোষণা করে দেন তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে এই কেন্দ্রে ভোজপুরি গায়ক নায়ক পবন সিংকে প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু পরের দিনই পবন সিং প্রার্থী না হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ফলে বিভ্রান্তের সৃষ্টি হয় আসানসোলে বিজেপির অন্দর মহলে । এরপর বিজেপির প্রার্থী কে হবে আসানসোল কেন্দ্রে, সেই নিয়ে দীর্ঘদিন হতাশা বয়ে আনে বিজেপি মহলে ।
শেষ মুহূর্তে বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ আলুওলিয়াকে । অনেক দেরি করে প্রার্থী করায় সেইভাবে প্রচার করতে পারেননি বিজেপি প্রার্থী । প্রচারের প্রথম দিন থেকে আলুওয়ালিয়া নিজেকে আসানসোলের ভূমিপুত্র বলে প্রচার শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন এইভাবেই বাজিমাত করবেন, আসানসোলের মানুষের মন জয় করে নেবেন । হয়তো সেই রাজনৈতিক ফর্মুলা কাজে লেগেছিলো কিছুটা, তাই তিনি হারের মার্জিন কমিয়ে আনতে পেরেছেন ।

১৩ মে আসানসোল কেন্দ্রে ভোট হয় নির্বিঘ্নে। এই কেন্দ্রে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, এমনটা ভোটের পর আভাস পাওয়া গিয়েছিলো । তারফলে আসানসোল জুড়ে একটা জল্পনা চলে, শত্রুঘ্ন সিনহা জিতবেন নাকি সাংসদ হিসাবে জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন আলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার গণনা শেষে দেখা যায় ৫৯,৫৬৪ ভোটে আলুওয়ালিয়াকে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। আসানসোল লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে লিড পায় তৃণমূল প্রার্থী। কুলটিতে ১৫,০৫৩ ও আসানসোল দক্ষিণে ১২,১৪৭ ভোট বেশি পান আলুওয়ালিয়া। তৃণমুল প্রার্থী আসানসোল দক্ষিণে পেয়েছেন ৮৪,৫৮২ ভোট, সেখানে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৯৬,৭৩৯ ভোট । কুলটি বিধানসভা দখলে রয়েছে বিজেপির । তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখানেও চরমে ।
কুলটিতে তৃণমূল প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৭৯,০৫৫ ভোট আর বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৯৪,১০৮ ভোট । বিজেপি প্রার্থী লিড পেয়েছেন ১৫,০৫৩ ভোটে ।অন্যদিকে পাণ্ডবেশ্বর ৪০,০২৩ বারাবনি ২৫, ৫২৩ ও জামুরিয়া ১১,৮৭১ রানীগঞ্জ ৪,৪৫২ ও আসানসোল উত্তর থেকে ৪৩৬৭ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন বিহারীবাবু।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, জামুরিয়া এই তিনটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বির থেকে বেশি ভোট পাওয়ায় জয় নিশ্চিত হয় শত্রুঘ্ন সিনহার। তাদের মতে আরও দুটি ফ্যাক্টর তৃণমূল প্রার্থীকে জিততে সহায়ক হয়ে থাকতে পারে ।
প্রথমটি হল “লক্ষীর ভান্ডার” প্রকল্প। প্রকল্পটির কারণেই হয়তো সিংহভাগ মহিলারা ভোট দিয়েছেন তৃণমূল প্রতীকে। অপরটি হিন্দিভাষী ভোট ফ্যাক্টর। এই কেন্দ্রে হিন্দিভাষী ভোটার রয়েছে যথেষ্ট সংখ্যক। যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিজেপির ভোটার হিসেবে পরিচিত। বিজেপি এবার হিন্দিভাষীদের মন জয় করার কাউকে প্রার্থী না করায় হিন্দিভাষীদের বড় অংশের ভোট এবার পড়েছে ঘাসফুলে। এইসব ফ্যাক্টার গুলির কারণেই হয়তো এবার আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় ও তৃণমূল প্রার্থীর জয় এসেছে ।



Be First to Comment