আসানসোল : আসানসোল গুলি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কয়লা মাফিয়া জয়দেব মন্ডলকে চারদিন সিআইডি হেফাজতের পরে বুধবার আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়। এদিন এই মামলায় আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি জয়দেবকে আরও ১০ দিনের হেফাজতে চায়।
আদালতে এদিন ভারপ্রাপ্ত সিজিএম অভিষেক মান্নার এজলাসে সওয়াল-জবাবের সময় জয়দেব মন্ডলের আইনজীবী সোমনাথ চট্টোরাজ সিআইডির হেফাজতে নেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি জামিন চান। তখন সরকারি আইনজীবী বা পিপি মনোজ সিনহা অভিযুক্তর আইনজীবীর আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং এই মামলায় আরও তদন্তের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পক্ষে জোর সওয়াল করেন। শেষ পর্যন্ত সওয়াল-জবাব শেষে ভারপ্রাপ্ত সিজিএম জয়দেব মণ্ডলের জামিন নাকচ করে চারদিনের জন্য সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পরে জয়দেব মণ্ডল আইনজীবী সোমনাথ চট্টোরাজ বলেন, আমার মক্কেল জয়দেব মন্ডলকে গুলি করে একজনকে খুনের চেষ্টার মামলায় গত ১জুন সিআইডি গ্রেফতার করে চারদিনের হেফাজতে নিয়েছিল। সেই চারদিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আরো ১০ দিনের সিআইডি হেফাজত চাওয়া হয়। এই চারদিনে তেমন কোনও কিছু তথ্য পাওয়া যায় নি বলে আমি তার বিরোধিতা করি। কিন্তু বিচারক তার জামিন নাকচ করে আরও চারদিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আগামী ৯ জুন আবার তাকে আদালতে পেশ করা হবে।সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, জয়দেব মন্ডলকে এই ঘটনায় ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তারজন্যই তাকে এদিন আসানসোল আদালতে পেশ করে ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আসানসোল গুলি কান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে আসানসোল উত্তর থানার চন্দ্রচূড় মন্দিরের কাছে ১৯ নং জাতীয় সড়কে একটি হোটেলের সামনে ব্যবসায়ী দীনেশ গড়াইয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরবাইকে আসা দুষ্কৃতী। তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় জয়দেব মন্ডল সহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করেছিলেন ব্যবসায়ী দীনেশ গড়াই।প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ীকে গুলি চালানোর ঘটনায় প্রথমে তদন্ত করছিল আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। পরে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডি এই ঘটনার তদন্ত করার দায়িত্ব পায়।
ঘটনার দিন রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া জয়দেব মণ্ডলের চার সঙ্গীকে সেই সময় রিমান্ডে নিয়েছিল সিআইডি। তাদের নাম হলো অভিষেক মুখোপাধ্যায়, টিঙ্কু কুমার প্রসাদ, পঙ্কজ কুমার সিং এবং কুলদীপ কুমার ওরফে কাল্লু। কিন্তু, এই মামলায় মূল অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডল খুঁজে পাচ্ছিল না সিআইডি। তাদের তরফে তার ফেরার থাকার কথা আসানসোল আদালতে সিজিএমের এজলাসে জানানো হয়।
গত ৩০ এপ্রিল তার ভিত্তিতে আসানসোল আদালত থেকে জয়দেবের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর গ্রেফতারি এড়াতে জয়দেব আইনজীবী মারফত কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি খারিজ করে দেন। এরইমধ্যে গত ২১ মে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে কয়লা পাচার মামলায় চার্জ গঠনের দিন চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন জয়দেব মণ্ডল। সেদিন সিবিআই আদালতে সিআইডির তরফে তাদের মামলা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। সিআইডির অফিসাররা সেদিন জয়দেব মন্ডলকে ধরতে আসানসোল আদালতে হাজিরও ছিলেন। কিন্তু জয়দেব না আসায়, তাদেরকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
এরপর গ্রেফতারি এড়াতে জয়দেব গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সেখানেও তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তাকে এই মামলায় অবিলম্বে আত্মসাৎ করতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারপরও সে আত্মগোপন করেছিল। শেষ পর্যন্ত, শনিবার জয়দেব মন্ডলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি। জানা গেছে, সিআইডি এখন জয়দেবকে জেরা করে জানতে চাইছে, দীনেশ গড়াইয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে কেনও এবং কারা গুলি চালিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৯ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া জমি দখলকে কেন্দ্র করে গত বছর এই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল বলে সিআইডি প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। এই ঘটনায় আর কেউ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে সিআইডি।



Be First to Comment