আসানসোল : সাধারণ মানুষ নয়। এ বার সাইবার অপরাধ চক্রের শিকার হল আসানসোল পুরনিগম। আসানসোলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে থাকা পুরনিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে ৪০ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কে ভুয়ো লেটারপ্যাডে ফোন নম্বর বদলের আবেদন জানিয়েও একটি ক্যানসেল চেকের ক্লোন করে হাতানো হয়েছে এই টাকা।
মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই আসানসোল পুরনিগমে আধিকারিক ও কর্মী মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে অভিযোগ দায়েরের নির্দেশ দেন পুরনিগমের অর্থ দপ্তরকে। সেই মতো অর্থ দপ্তরের আধিকারিক ফিনান্স অফিসার বুধবার বিকেলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের আসানসোল সাইবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার ভিত্তিতে সাইবার থানা নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।
এই নিয়ে সরব হয়েছেন দুই বিরোধী দল বিজেপি ও কংগ্রেস। বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ও আসানসোল পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর গোলাম সরবর পুরনিগমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এই প্রসঙ্গে এদিন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, আসানসোলের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় পুরনিগমের অ্যাকাউন্ট আছে। ২৮ অক্টোবর সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে যায়। যদিও পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ১২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে ।
ঘটনা প্রসঙ্গে বিধান উপাধ্যায় বলেন, আসানসোল পুরনিগমের একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাওয়া টাকা মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের একটি একাউন্টে জমা পড়েছিল। পরে তার মধ্যে থেকে ২৮ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার হয়ে যায় অন্য একাউন্টে। এই ঘটনায় আসানসোল পুরনিগমের তরফে সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মেয়র আরো বলেন, পুরনিগমের ভুয়ো লেটার প্যাডে মোবাইল নম্বর বদল করার আবেদন জমা পড়েছিল ব্যাঙ্কের ওই শাখায় । সেই সূত্র ধরেই পুরনিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ টাকা উধাও হয়।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুরনিগমকে বিষয়টি জানানোর পরই একাউন্ট থেকে টাকা উধাও হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে।
অনুমান করা হচ্ছে, পুরনিগমের কাছে থাকা ক্যানসেল চেকের ক্লোন বা জাল করে এই টাকা হাতানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এই নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ও আসানসোল পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর গুলাম সরবর বলেন, আসানসোল কুলটি বোরো অফিস থেকে ৮৭ লক্ষ টাকা উধাও হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আমি আসানসোল পুরনিগমের বোর্ড মিটিংয়ে বারবার তুলেছি । ২০২১ সালের এই ঘটনা। কাউন্সিলরের অভিযোগ, কুলটি বোরো অফিসের অর্থ বিভাগের কর্মী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকা জমা করেননি।
এই বিষয়ে, ৩ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে কুলটি থানায় একটি জিডি করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। তারপরে তিন বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু সেই টাকার কোনো হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। এখন আবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ টাকা বেরিয়ে গেল কিভাবে? আমরা চাই ঘটনা তদন্ত করে এর রহস্য বার করা হোক।
কৃষ্ণেন্দুবাবু আরো বলেন, আসানসোল পুরনিগম দূর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে গেছে। এর পেছনে পুরনিগমের আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের একাংশ আছেন।
এই সম্পর্কে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (হেডকোয়ার্টার) অরবিন্দ কুমার আনন্দ বুধবার বলেন, আসানসোল পুরনিগমের তরফে মঙ্গলবার রাতে মৌখিকভাবে আমাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এদিন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সাইবার থানায়। সেই মতো মামলা করে খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, ওই ব্যাঙ্কের তরফে এখনই কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের তরফে বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Be First to Comment