আসানসোল : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কড়া হুঁশিয়ারির সঙ্গে বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, বেআইনি জমি দখল বন্ধ করতে হবে। জমি মাফিয়াদের দৌরাত্মে লাগাম টানারও নির্দেশ দিয়েছিলেন
মুখ্যমন্ত্রী । তা সত্ত্বেও জমি দখলদার বা মাফিয়াদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আসানসোলে। আবারও আসানসোলের আপার হিলভিউ এলাকায় জমি মাফিয়াদের হামলা সামনে এলো। দিন কয়েক আগে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
অভিযোগ, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ৪০/৫০ জনের একদল দুষ্কৃতি হামলা চালিয়েছে জমি মালিকদের উপরে। গত ১ ডিসেম্বর হওয়া সেই হামলার ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া সেই সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ৪০/৫০ জনের দল এলাকায় ঢুকে লাঠি হাতে নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করার পাশাপাশি জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার পর আপার হিলভিউ এলাকার বাসিন্দারা গোটা বিষয়টি জানিয়ে হিরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাদের দাবি, জমি মাফিয়ারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সবকিছু জানার পরেও পুলিশ ও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ প্রশাসনের এই নরম ভূমিকার কারণে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ দায়ের করার পরেও, পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায়, এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে অবহিত করা হয় রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটককে। এই ঘটনার কথা জানার পরে মন্ত্রী আপার হিলভিউ এলাকায় যান। তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদেরকে মন্ত্রী মলয় ঘটক এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মলয় ঘটক বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। যত দ্রুত সম্ভব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। এই ব্যাপারে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, হামলাকারী জমি মাফিয়া ও তাদের সঙ্গীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।এলাকার বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের কারণে এলাকায় শান্তি নষ্ট হচ্ছে। তারা পুলিশ, প্রশাসন ও মন্ত্রীর কাছে এই ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে, হিরাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। সবাই এলাকা ছাড়া রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, হামলাকারীদের পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ছিল।
প্রসঙ্গত, গত চার মাসে আসানসোল পুরনিগমের তরফে আসানসোল দক্ষিণ, আসানসোল উত্তর ও রানিগঞ্জ থানায় বেআইনি ভাবে পুকুর ও সরকারি জমি দখলের ১১ টির মতো অভিযোগ দায়ের করা। কিন্তু পুলিশ প্রথমে সেইসব অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরে গত নভেম্বর মাসের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুতে আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ থানার পুলিশ আসানসোল পুরনিগমের করা পৃথক তিনটি অভিযোগে ৫ জনকে পুকুর ভরাটের জন্য গ্রেফতার করে। যদিও দিন কয়েকের মধ্যেই তথ্য প্রমাণ পুলিশ পেশ করতে না পারায়, তারা আসানসোল আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। রানিগঞ্জ থানার পুলিশও চারজনকে গ্রেফতার করে।




Be First to Comment