আসানসোল : এক রোগীর মৃত্যুতে আসানসোল শহরের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল।
চিকিৎসা সংক্রান্ত পুরো বিল না দেওয়ায় রোগীর মৃতদেহ পরিবারকে দিতে অস্বীকার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, আগে ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা দেওয়ার পরে আরো ৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা দেওয়ার মতো আর্থিক সংস্থান না থাকার কথা পরিবারের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও মৃতদেহ দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে মৃত রোগীর পরিবারের সদস্যরা এদিন সকালে ওই হাসপাতালের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন।
যা নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ হাসপাতালে আসে। শেষ পর্যন্ত ২২ ঘন্টা পরে পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও সংবাদ মাধ্যমের চাপে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেহ দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনাটি আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরীকে পরিবারের তরফে চিঠি লিখে সব জানানো হয়। একইভাবে, অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খানের কাছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সিএমওএইচ একটি টিম তৈরি করে গোটা ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের ব্যাঙ্ক কলোনির বাসিন্দা মৃত রোগীর নাম কুন্তল সাহা (৫৩)। এদিন বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালে রোগীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ একটি আলাদা করে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে।
তবে ওই হাসপাতালের তরফে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, নিয়ম মতো বিল দিয়ে বাকি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এখন পরিবারের তরফে যখন স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশকে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তখন তারাই তদন্ত করে দেখুক। আমরা সবরকম সহযোগিতা করবো।
জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর ধানবাদের বাসিন্দা কুন্তল সাহা বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে তার ব্রেন হেমারেজ হয়। বাড়ির লোকেরা তাকে ৬ ডিসেম্বর আসানসোলের সেনরেল রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার দুপুরে সেই হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়।
এই প্রসঙ্গে এদিন কুন্তলবাবুর ছেলে অরিত্র সাহা বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর বাবাকে এই হাসপাতালের নিউরো বিভাগে ভর্তি করা হয়। ৯ ডিসেম্বর তার অস্ত্রপচার হয়। ১৭ ডিসেম্বর আমাদেরকে বলা হয়, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ। তাকে ভেন্টিলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে বাবাকে নিউরোলজিস্টের পরিবর্তে একজন সাধারণ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরে আমরা তা জানতে পারি।
তিনি আরো বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভেন্টিলেশনে চিকিৎসা চলে। বুধবার দুপুরে বলা হয়, বাবা মারা গেছেন। এর মধ্যে বাবার চিকিৎসার জন্য আমরা প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন বাবার দেহ দিতে আরো ৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই টাকা না দিলে দেহ দেওয়া হবে না। আমরা আগেই বলেছিলাম যে আমাদের কাছে আর কোনও টাকা নেই। তিনি বলেন, তিনি তার বাবার চিকিৎসার জন্য ঝাড়খন্ড থেকে এসেছিলেন। বাবার কি চিকিৎসা হয়েছে, কি ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। আমরা মনে করছি, চিকিৎসায় গাফিলতির কারনে বাবার মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতা থেকে আসা পারিবারিক বন্ধু বাপি সাহা বলেন, কুন্তল সাহা একমাত্র পরিবারের আয় করতেন। এখন তার মৃত্যুর পর তার পুরো পরিবার সমস্যায় পড়েছেন। তা সত্ত্বেও হাসপাতাল তার পরিবারের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করছে। সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় আমরা দেহ পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে পরিবারের তরফে ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনার ও স্বাস্থ্য দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাবো।
এই প্রসঙ্গে সিএমওএইচ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। একটি টিম তৈরি করে সেই অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। গাফিলতি পাওয়া গেলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।




Be First to Comment