অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা, কুলটি : এশিয়ার গভীরতম বা ডিপেস্ট কোলিয়ারিতে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। কয়লা তোলার আগে পুরনো হেড গিয়ার মেরামত করতে গিয়ে কয়লা খনির ভেতরে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল একটি বেসরকারি ঠিকাদার কোম্পানির দুই কর্মীর। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটিতে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার চিনাকুড়ি ১/২ নম্বর কোলিয়ারিতে। মৃত দু’জনের নাম আকাশ বাউরি (৩০) ও অনিল যাদব ( ৩২)। দু’জনের বাড়ি কুলটি থানা এলাকায় বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার পরে মৃত দুই যুবকের পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা কোলিয়ারি এলাকায় এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাদের দাবি, মৃত দু’জনের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতি পূরণ ও নিয়ম মেনে একজনকে চাকরি দিতে হবে।
এই বিক্ষোভের জেরে কোলিয়ারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুলটি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

এই ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সিটু সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কয়লাখনির নিরাপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে ইসিএলের কোন যোগ না থাকলেও, যেহেতু কোলিয়ারিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাই তদন্ত করা হবে বলে এ দিন সন্ধ্যায় সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী জানিয়েছেন।
ঘটনার খবর পরে সন্ধ্যা নাগাদ এলাকায় আসেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক ডা. অজয় পোদ্দার। তিনি এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “মোট ৫ জন এখানে মেরামতের কাজ করছিলেন। তারমধ্যে মাত্র এক জন সেফটি বেল্ট পরেছিলেন। তার মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে ডিজিএমএস বা ডিরেক্টর অফ মাইনস্ সেফটির নির্দেশ মানা হয়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমি ইসিএলের সিএমডির সঙ্গে কথা বলবো। তিনি আরো জানা, যে বেসরকারি কোম্পানি এই কাজ করছিল, তাদের গাফিলতি আছে। আমি এই ঘটনা নিয়ে দুটি তদন্তের দাবি করছি। একটি করবে ডিজিএমএস। অন্য একটি করবে কয়লা মন্ত্রক।”
এ দিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কোলিয়ারিতে আন্দোলন করার ডাক দিয়েছে।
জানা গেছে, ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার চিনাকুড়ি ১/২ নম্বর গভীরতা ২২০০ ফুট বা সাড়ে ছয়শো মিটার।
এশিয়ার গভীরতম এই কোলিয়ারিতে জল ঢুকে যাওয়ায় ২০১৩ সালে এই কোলিয়ারি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বছর খানেক আগে কয়লা মন্ত্রক এই কোলিয়ারি থেকে কয়লা তোলার জন্য বিকেএম নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। আগেই এই কোলিয়ারি থেকে নতুন করে কয়লা তোলা কাজ করার জন্য ডিজিএমএসের কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই কোলিয়ারির হেড গিয়ার ঠিক নেই। তা নিয়ম মেনে মেরামত করতে হবে। সেই মতো ওই কাজ করার জন্য এই বেসরকারি কোম্পানি অন্য একটি ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। সেই সংস্থার পাঁচজন কর্মী এদিন সকাল থেকে কোলিয়ারির হেড গিয়ারের উপরে উঠে সেই মেরামতের কাজ করছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘটে এই ঘটনা।
এই কাজে থাকা এক কর্মী অজয় রায় বলেন, “আমরা পাঁচজন কাজ করছিলাম। তারমধ্যে একমাত্র আকাশ বাউরি সেফটি বেল্ট পড়েছিলেন। বিকেলে যখন হেড গিয়ারের লোহার চাদর তোলা হচ্ছিল তখন আকাশ উপর থেকে নিচে পড়ে ডুলিতে আটকে যান। তার একটি পা কেটে যায় । তিনি চিৎকার করতে থাকেন।” অন্যদিকে অনিল যাদব সোজা কয়লাখনির ভেতরে চলে যায়। প্রথমে আকাশকে উদ্ধার করে শাঁকতোড়িয়ায় ইসিএলের হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর বেশ কিছুক্ষণ পরে ২২০০ ফুট গভীর থেকে অনিলকে একেবারে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে ইসিএলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অনিল যাদবের পুরো শরীর পাওয়া যায়নি। তার দেহাংশ পাওয়া গেছে।
এদিকে কুলটি থানার পুলিশ জানায়, মৃত দুজনের পরিবারের তরফে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয় নি। করা হলে তদন্ত করা হবে। বুধবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে দু’জনের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হবে।




Be First to Comment